জনপ্রিয় ব্রিটিশ লেখক স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজের ‘The Rime of the Ancient Mariner’ কবিতার কথা সবার মনে আছে তো? যেখানে অ্যালবাট্রোস পাখিকে হত্যা ও তাকে ঘিরে মাঝ সমুদ্রে একদল নাবিকের জীবনের করুণ পরিণতি তুলে ধরেন লেখক।
কবিতার জনপ্রিয় লাইন ‘An albatross around your neck’ থেকে প্রবাদেরও উৎপত্তি ঘটে, যেখানে এই পাখিকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। তবে অ্যালবাট্রোস নিয়ে যত মিথই থাকুক না কেন, দক্ষ ভ্রমণকারী ও বিশালাকার এই পাখিটির জীবনশৈলী ও ব্যক্তিত্ব কিন্ত আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করবে।
পাখিদের মধ্যে শ্বেতশুভ্র, সুন্দর এই অ্যালবাট্রস ‘পোস্টার বার্ড’ হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ। বিশাল ডানার এই পাখি মাইলের পর মাইল সমুদ্র একই সঙ্গীর সাথে পার করে দেয়; প্রজননও ঘটায় একই সঙ্গীর সাথে।
পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালবাট্রসদের মধ্যে সঙ্গীদের ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে কম। তবে বিচ্ছেদ যে একেবারেই ঘটে না, তা নয়। এমআইটির বিজ্ঞানীরা এবং উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রসদের মধ্যে বিচ্ছেদের প্রধান ফ্যাক্টর হলো ব্যক্তিত্ব। যে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছে ‘বায়োলজি লেটারস জার্নাল’।
গবেষণায় বলা হয়েছে, অ্যালবাট্রস জুটির মধ্যে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে পুরুষ অ্যালবাট্রসের ‘সাহসিকতা’। পুরুষ সঙ্গীটি যত বেশি সাহসী ও আগ্রাসী আচরণ করবে, তার সঙ্গীনি তাকে তত বেশি পছন্দ করবে। কিন্তু পুরুষ অ্যালবাট্রস যত বেশি লাজুক স্বভাবের হবে, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের ঝুঁকি ততই বেড়ে যাবে।
গবেষণার সিনিয়র লেখক স্টেফানি জেনুবিয়ার বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম পুরুষ সঙ্গীটি বেশি সাহসী ও আগ্রাসী হলে বিচ্ছেদের হার বেশি হবে, কারণ তারা সঙ্গীকে ত্যাগ করে নতুন কাউকে বেছে নেওয়ার দিকে বেশি আগ্রহী হবে ভবিষ্যতে আরও ভালো প্রজননের আশায়। কিন্তু এখানে দেখতে পাচ্ছি সম্পূর্ণ উল্টো ব্যাপার। লাজুক পুরুষ সঙ্গীদের ক্ষেত্রেই বিচ্ছেদ বেশি হয় কারণ অন্য সাহসী পুরুষ অ্যালবাট্রস তখন তাকে হটিয়ে জায়গা করে নিতে চায়।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যালবাট্রসরা ৫০ বছরের বেশি বাচে। অধিকাংশ সময়ই তারা ডানার ওপর ভর করে থাকে। তারা প্রতি দুই বছরে একই সঙ্গীর সঙ্গে প্রজননের জন্য মিলিত হয়। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশেরই বিচ্ছেদ ঘটে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষকরা প্রায় ২ হাজার অ্যালবাট্রসের চালচলন অধ্যয়ন করে এসব তথ্য উদ্ধার করেছেন।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী অ্যালবাট্রসের ব্যক্তিত্ব তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। কিন্তু পুরুষ সঙ্গীর আচরণ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে লাজুক স্বভাবের পাখিদেরই বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশি বলে প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
কারণ ব্যাখা করতে গিয়ে গবেষকরা জানান, ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রসদের মধ্যে পুরুষ অ্যালবাট্রসের সংখ্যা নারী অ্যালবাট্রসের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে পুরুষ অ্যালবাট্রসদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। তারা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে একটি নারী অ্যালবাট্রসের সাথে জুটি বাঁধতে চায়। ফলে জুটিদের মধ্যে ‘তৃতীয় ব্যক্তি’র আগমন ঘটে।
এসময় লাজুক স্বভাবের পুরুষ সঙ্গীটি লড়াই করে নিজের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারে না, ফলে সে তার সঙ্গীনিকে হারায়। কিন্তু পুরুষ সঙ্গীটি সাহসী হলে সে তার সঙ্গীনিকে পাহারা দিতে পারে এবং নিজেদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে।
২০০৮ সাল থেকে ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রসদের ব্যক্তিত্ব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ডা.সামান্থা প্যাট্রিক। বছরের পর বছর ধরে পাখিদের ব্যক্তিত্বের নানা বিষয় পরিমাপ করেছেন প্যাট্রিক। তার এ গবেষণা দেখেই অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, মানুষের বিচ্ছেদের সাথেও তাদের ব্যক্তিত্বের সংযোগ রয়েছে কি না।
https://www.facebook.com/bbsbangla.news/videos/1070458640309941