fbpx

ক্যাপাডোসিয়া: তুরস্কের এক রূপকথার শহর

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

ইট-কাঠ-লোহা-কংক্রিটে ঠাসা বা মানুষের তৈরি ভবন দিয়ে সাজানো কোন শহর নয়, অথবা মানুষের পছন্দে গড়া পরিকল্পিত নগরও নয়, প্রকৃতির আপন পছন্দে পাথরের পর পাথর দিয়ে গড়ে ওঠা তুরস্কের এক স্বপ্নের শহর, ‘ক্যাপাডোসিয়া’।

কথিত আছে, ২৫ লক্ষ বছর আগে গোরমে উপত্যকার বিস্তীর্ণ এলাকায় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ছাই জমে তৈরি হয়েছে এরকম উইপোকার ঢিবির মতো পাথরের পাহাড়। এই পাহাড় তুলনামূলক নরম হওয়ায় খোদাই করে তার ভেতর মানুষের বসবাসের উপযোগী সুড়ঙ্গ ও গুহা তৈরি করা হয়। একেকটি গুহা প্রকৃতি ও মানুষের অসাধারণ এক শিল্পের মিশ্রণ। যা পৃথিবীর অন্য কোন অঞ্চলে দেখা মেলা ভার।

ক্যাপাডোসিয়া: তুরস্কের এক রূপকথার শহর

পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে এক রূপকথার শহর।

খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে ক্যাপাডোসিয়ার গোরমে উপত্যকায় মানুষের বসবাস শুরু হয়। তার আগে এই অঞ্চলটি ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সাম্রাজ্য পারস্য ও গ্রিকের সীমান্তবর্তী এলাকা। সাম্রাজ্যগুলোর অভ্যন্তরীন দ্বন্দের কারণে প্রায়ই স্থানীয় বাসিন্দাদের পাহাড়ের পাদদেশে লুকিয়ে থাকতে হতো। একটা সময় পর এসব পাহাড় হয়ে ওঠে তাদের বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা। সেই গোরমে উপত্যকা এখন পরিণত হয়েছে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।

ক্যাপাডোসিয়ার গোরমে উপত্যকার পাহাড়গুলো কালে কালে বাতাস ও পাানিতে ক্ষয়ে এক অদ্ভুত রূপ ধারণ করেছে। কোনটা বিশাল আকৃতির পিলার, কোনটি দেখতে চিমনির মতো, কোনটি আবার মাশরুম আকৃতির। স্থানীয়দের মতে, পাতাললোকের পরীরা একসময় এই পাহাড়গুলোতে বাস করতো। তাই এই অদ্ভুত আকৃতির পাহাড়গুলোকে তারা চেনেন ফেইরি চিমনি নামে। একেকটি চিমনির উচ্চতায় প্রায় ১৩০ ফুট।

ক্যাপাডোসিয়া: তুরস্কের এক রূপকথার শহর

যুগে যুগে প্রকৃতির পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ের আকৃতিতেও এসেছে নান্দনিক পরিবর্তন।

খোদাই করা এসব পাহাড়গুলোতে ভবন আছে আট তলা পর্যন্ত। ভবনগুলোর মধ্যে অসাধারণ ভেন্টিলেশনের অর্থ্যাৎ বাতাস আসা যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আছে শোবার ঘর, নামাজের ঘর, এমনকি গৃহপালিত পশু পাখি রাখার ব্যবস্থা। গুহার ভেতর মাটির নিচ দিয়ে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাবার ব্যবস্থাও রেখেছেন নির্মাণকারীরা। মাটির নিচেই গড়ে উঠেছে রূপকথার মতো এক অন্যরকম সভ্যতা। কিছু কিছু গুহাকে প্রাসাদ বললেও ভুল হবে না। কোনটিতে আবার পর্যটকদের জন্য আছে থাকা খাওয়ারও ব্যবস্থা।

ক্যাপাডোসিয়া: তুরস্কের এক রূপকথার শহর

দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের কাছে তুরস্কের ক্যাপাডোসিয়া এখন বেশ জনপ্রিয়।

ক্যাপাডোসিয়ার কার্পেটের দোকানগুলোতে গেলে বোঝা যায়, এই অঞ্চলের মানুষ কতটা শিল্পগুণ সমৃদ্ধ। এই শহরে আছে বিশাল এক খোলা যাদুঘর। ‘জেলভে ওপেন এয়ার মিউজিয়াম’ নামের এই যাদুঘরের ভেতরে আছে আটটি গির্জা। গির্জাগুলোতে সপ্তম শতাব্দীতে আঁকা বেশকিছু চিত্রকর্ম দেখলে তাদের শিল্পের নিদর্শন পাওয়া যায়।

ক্যাপাডোসিয়া: তুরস্কের এক রূপকথার শহর

ঠিক সন্ধ্যে নামার আগে হট এয়ার বেলুনগুলো আকাশে ওড়ার পর এক অদ্ভুত লাল-কমলা আগুন রঙের নগরীতে পরিণত হয় ক্যাপাডোসিয়া।

বিশ্বের অনেক সুন্দর শহর দূর থেকে আকর্ষণীয় মনে হলেও কাছে গেলে তার সৌন্দর্য ম্রিয়মান হয়ে যায়। কিন্তু ক্যাপাডোসিয়ার সৌন্দর্য কাছ থেকে যেমন সুন্দর, দূর থেকে আরও বেশি মনোমুগ্ধকর। গরম বাতাসে ওড়ানো বেলুনে চড়ে দূরের আকাশ থেকে ক্যাপাডোসিয়া দেখার অভিজ্ঞতা থেকে তাই জানিয়েছেন পর্যটকেরা। ক্যাপাডোসিয়ার মূল শহর পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলেও এর আশেপাশের নেভশেহির, আভানোস, উরুগুপ, উছিছার ভিলেজ, কাভুসান ভিলেজও পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

Advertisement
Share.

Leave A Reply