১৮ অক্টোবর ২০১৮, সকাল থেকেই ছড়িয়ে পড়ে ‘আইয়ুব বাচ্চু নেই’! বেলা বাড়তেই হাসপাতাল লোকে লোকারণ্য। চট্টগ্রামের শেষযাত্রার আয়োজনে জনসমুদ্র। এত বিষণ্নতা নিকট অতীতে দেখেনি ব্যান্ড সংগীতের সাম্রাজ্য। ফিকে হয়ে গেল এ প্রজন্মের ব্যান্ড সংগীত অনুরাগীদের ছেলেবেলা। চলে গেলেন ‘গিটারের জাদুকর’।
ছোটবেলা থেকেই বোহেমিয়ান আইয়ুব বাচ্চু, স্বভাবে ছিলেন বাউন্ডুলে। মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে ১৯৮৩ সালে ঢাকায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। উঠেছিলেন এলিফ্যান্ট রোডের এক হোটেলে। একটা সময় বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী তারকা হয়ে উঠলেন প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে। গিটার হাতে মঞ্চে গাইলে অগুনিত দর্শক কণ্ঠ মেলাতেন তার সঙ্গে। তার গিটারের ঝংকারে বিদ্যুৎ বয়ে যেত তরুণ-তরুণীদের শিরা-উপশিরায়। ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন ‘বস’। কারও কাছে ‘স্যার’। আর সবার কাছে সংক্ষেপে ‘এবি’।
আইয়ুব বাচ্চু মূলত রক ঘরানার গান করতেন। শ্রোতাদের কাছে ইংরেজি গান, হার্ড রক, ব্লুজ, অলটারনেটিভ রক নিয়ে গেছেন শুরু থেকে। ব্যান্ড সংগীতের প্রতি তারুণ্যের জোয়ারের ধারা ধরে রেখেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
সব ছাপিয়ে আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন গিটারের জাদুকর। গিটারের টুংটাং শব্দই যেন তার সমস্ত দেহ-মন-সত্তাজুড়ে বিরাজমান ছিল। আইয়ুব বাচ্চু সব সময় বলতেন, গিটার আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। গিটারের জন্যই ঘর ছেড়েছি।
রুপালি গিটার ফেলে চলে গেছেন তিনি, কিন্তু কিংবদন্তি নেই তারকা সংগীতের জগতে হয়ে আছেন ধ্রুবতারা।
আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, লিড গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও প্লেব্যাক শিল্পী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজের গড়া ব্যান্ড দল এলআরবি’র লিড গিটারিস্ট ও ভোকাল হিসেবে কাজ করে গেছেন। তার আগে সত্তরের দশকের শেষে ‘ফিলিংস ব্যান্ড’-এ যোগ দেন। এরপর দশ বছর সোলস ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট হিসেবেও কাজ করেছিলেন।
১৯৯১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এলআরবি। এরপর ‘রূপালি গিটার’, ‘রাত জাগা পাখি হয়ে’, ‘মাধবী’, ‘ফেরারি মন’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘বার মাস’, ‘হাসতে দেখ’, ‘উড়াল দেব আকাশে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি,’ ‘সেই তুমি কেন অচেনা হলে’, ‘একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘এক আকাশ তারা’সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান এই ব্যান্ড দলটি থেকে উপহার দিয়েছেন তিনি। আজও গানগুলো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট অর্থাৎ আজকের এই দিনেই চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। দেশীয় ব্যান্ড সংগীতের এই অগ্রপথিক যদি বেঁচে থাকতেন, তবে ১৬ আগস্ট তিনি পা দিতেন ৬১ বছরে। বিশেষ এই দিনে ভক্ত-অনুরাগীরা তাকে স্মরণ করছেন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। তিনি আজ অচেনা ভুবনে, সেখান থেকে আর না ফিরলেও তিনি তার সুরের মুর্ছনায় বাংলার সংগীতপ্রেমীদের মনে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।
https://www.facebook.com/eveningshow.bbs/videos/816866579685175