চলে গেলেন ঢাকাই সিনেমার মিষ্টি মেয়ে খ্যাত কবরী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন ষাটের দশকের তুমুল জনপ্রিয় এই নায়িকা। শুক্রবার রাত ১২টা ২০মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। কবরীর ছেলে শাকের চিশতী খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
জন্মসূত্রে কবরীর নাম ছিল মিনা পাল। ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীতে তার জন্ম। তার বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্যপ্রভা পাল। জন্মস্থান বোয়ালখালী হলেও শৈশব ও কৈশোর বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম নগরীতে। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে তার।
১৯৬৪ সালে ১৪ বছর বয়সে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ সিনেমার নায়িকা হিসেবে অভিনয় জীবনের শুরু কবরীর। এরপর অভিনয় করেছেন ‘হীরামন’, ‘ময়নামতি’, ‘চোরাবালি’, ‘পারুলের সংসার’, ‘বিনিময়’, ‘আগন্তুক’ সিনেমায়। জহির রায়হানের উর্দু সিনেমা ‘বাহানা’তে অভিনয় করেন তিনি। ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের কালজয়ী ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন এই বরেণ্য অভিনেত্রী।
কবরী বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিয়ে করেন সফিউদ্দীন সরোয়ারকে। ২০০৮ সালে তাঁদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সফিউদ্দীন সরোয়ারের সাথে কবরীর পাঁচ সন্তান রয়েছে।
কবরী অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘বেঈমান’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘জলছবি’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘রংবাজ’, ‘মাসুদ রানা’, ‘সুজন সখী’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘গুণ্ডা’, ‘আঁকাবাঁকা’, ‘কত যে মিনতি’, ‘অধিকার’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘বধু বিদায়’, ‘আরাধনা’, ‘বেইমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘কাচ কাঁটা হীরা’, ‘উপহার’, ‘আমাদের সন্তান’, ‘হীরামন’, ‘দেবদাস’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘দুই জীবন’ ইত্যাদি।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
বাংলাদেশের সিনেমা জগতের সোনালী সময়ের বিশেষ একটি অধ্যায়ের নাম কবরী। ‘সুতরাং’ সিনেমার জরিনা, ‘সাত ভাই চম্পা’র পারুল, ‘সুজন সখী’র সখী, সারেং বৌ’র নবীতুনসহ তার অজস্র কালজয়ী সৃষ্টির কবরীকে ভুলবে না বাংলাদেশের মানুষ। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যা করতেন, তাই হয়ে যেত ‘অভিনয়’। নক্ষত্রের এই পতনে বাংলা সিনেমা এক অপূরনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হলো।