fbpx

চিপস-নুডুলস-চানাচুর-বিস্কুটে দ্বিগুণ লবণ: গবেষণা প্রতিবেদন

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

দেশে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবারের ৬১ শতাংশে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে লবণের উপস্থিতি রয়েছে। এর মধ্যে বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ঝালমুড়ি, আচার ও ইনস্ট্যান্ট স্যুপের মত প্রচলিত প্যাকেটজাত খাবারে লবণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত, এমনটি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (এনএইচএফবি)।

গবেষণার তথ্যে দেখা গেছে, আচার ও চাটনির ৮৩ শতাংশ, চিপসের ৬৩ শতাংশ, ডাল-বুট ভাজার ৬০ শতাংশ খাবারে লবণের উপস্থিতি দ্বিগুণ। এসব প্যাকেটজাত খাবার এখন দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ গ্রহণ করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করা হয়।

চিকিৎসকরা বেশি লবণ খাওয়ার ফলে উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে খাবার প্যাকেটজাতকারী বড় কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকা এবং ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।

‘অ্যাসেসমেন্ট অব সল্ট কন্টেন্ট অ্যান্ড লেবেল কমপ্লায়েন্স অব কমনলি কনজিউমড প্রোসেসড প্যাকেজড ফুডস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গবেষণাটি ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়। যেখানে দেশের আটটি বিভাগে বিভিন্ন বয়সের ৯৭৪ জন অংশ নেন।

এছাড়া ১৬টি প্যাকেটজাত পণ্যের ১০৫টি নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা সমন্বয়কারী ও ফাউন্ডেশনের রেজিস্টার ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ডা. শেখ মো. মাহবুবুস সোবহান গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ এ ধরনের খাবার গ্রহণ করেন। একজন ব্যক্তি সপ্তাহে ১৫ বার অর্থাৎ দৈনিক দুবারের বেশি এমন খাবার খান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারে লবণের নিরাপদ মাত্রা ৭৫০ মিলিগ্রাম বিবেচনা করেছে এনএইচএফবি। গবেষণার তথ্যে দেখা গেছে, বাজারে প্রচলিত ৬১ শতাংশ প্যাকেটজাত বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনিতে লবণের উপস্থিতি এর চেয়ে বেশি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রক্রিয়াজাত এসব খাবারে লবণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা নেই। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইচ্ছেমত লবণ মেশাচ্ছে। গবেষণার আওতায় আনা খাবারের ৪৪ শতাংশ প্যাকেটে উল্লেখিত পরিমাণের চেয়েও বেশি লবণ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ডা. আবদুল আলীম বলেন, খাবারে লবণের পরিমাণ কতটুকু তা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্যাকেটের গায়ে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু তারা সেটা মানছে না।

তিনি বলেন, ‘তারা ডিক্লেয়ারেশন দিচ্ছে যে এক গ্রাম লবণ আছে, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ছয় গ্রাম। এটা খুবই খারাপ, তার মানে তারা যে ক্লেইম করছে যে লবণ দেওয়া হয় নাই সেটা কিন্তু তারা বাড়িয়ে বলছে। এটা ঠিক না, তারা আইন অমান্য করছে। এ ব্যাপারে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা উচিত। বড় প্রতিষ্ঠান যারা খাবার প্যাকেটজাত করছে তাদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদের সচেতন হওয়া জরুরি।’

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী এসব প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে উল্লেখ করে বলেন, ‘লবণ বেশি খেলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে, অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এ কারণে আমরা যদি লবণ খাওয়া কমাতে পারি তাহলে উচ্চ রক্তচাপ কমবে, অন্যান্য আরও কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে যাবে।’

অনুষ্ঠানে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর এর বাংলাদেশ প্রধান মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খালেদা ইসলাম, অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, এনএইচএফবির সল্ট রিডাকশন প্রোগ্রামের পরামর্শক আবু আহমেদ শামীম, বিএসটিআইয়ের উপ পরিচালক মো. এনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement
Share.

Leave A Reply