চীনের ‘লং মার্চ ৫বি রকেট’ টির ১০০ ফুট লম্বা মূল অভ্যন্তরীণ অংশের (কোর) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেছে। যা চীনের মহাকাশ প্রকল্প ‘তিয়ানহে স্পেস স্টেশন’র জন্য পাঠানো হয়েছিল। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এটি পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে পড়তে পারে।
গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, চীনের হুনান থেকে গত ২৯ এপ্রিল রকেটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি সফলভাবে তিয়ানহে স্পেস স্টেশনের মডিউলকে কক্ষপথে স্থাপন করতে পারলেও পরে তার উপর নিয়ন্ত্রণ হারায় গ্রাউন্ড স্টেশন। এটি এখন ঘুরছে পৃথিবীর কক্ষপথে। তবে চিন্তার বিষয় হলো, এই রকেটের ভেতরের ৩০ মিটার অর্থাৎ ১০০ ফুট লম্বা একটি অংশ আলাদা হয়ে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কয়েকদিনের মধ্যেই ঢুকে পড়বে। আর তা যদি জনবসতিপূর্ণ কোনো এলাকায় আছড়ে পড়ে, তবে সেখানে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গার্ডিয়ানে আরও বলা হয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিক্স সেন্টারের বিশেষজ্ঞ জনাথন ম্যাকডোয়েল জানান, পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। এর আগেও চীন ‘লং মার্চ ৫বি রকেট’ উৎক্ষেপন করলে তখনও এর কিছু লম্বা বড় ধাতব অংশ আইভরি কোস্টে পড়ে বেশকিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যদিও বায়ুমন্ডলের সাথে সংঘর্ষের ফলে এর বেশিরভাগ অংশই জ্বলে গিয়েছিল, তারপরও প্রচুর ধাতব টুকরো পৃথিবীতে এসে পড়েছিল। তবে সে সময় কেউ হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ম্যাকডোয়েল আরও জানান, রকেট থেকে আলাদা হওয়া অংশটি প্রতি ৯০ মিনিটে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করছিল। যার গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২৭ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। এটি আলাদা হওয়ার সময় পৃথিবী থেকে ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি উচ্চতায় ছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, রকেটের টুকরোটি প্রায় ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছিল বলেও জানান তিনি।
এদিকে স্পেসনিউজ জানিয়েছে, যেহেতু রকেটের অংশটি এখন আর নিয়ন্ত্রণে নেই, তাই এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ঠিক কোথায় পড়বে, তা এখনই অনুমান করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে বিশেষজ্ঞ জনাথন ম্যাকডোয়েল ধারণা করছেন, টুকরোটি সমুদ্রে পড়তে পারে। আর কিছু টুকরো হয়তো পুথিবীতে এসে পড়বে। আর এর ফলে, ১০০ মাইল এলাকা জুড়ে একটি ছোট বিমান যেভাবে বিধ্বস্ত হয়, সেভাবে এটি বিধ্বস্ত হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে।
জানা যায়, পৃথিবীতে ১৯৯০ সাল থেকে যেসব রকেটের অনিয়ন্ত্রিত রিএন্ট্রি ছিল, সেগুলোর সবগুলোই ছিল ১০ টনেরও কম ওজনের। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, ‘লং মার্চ ৫বি রকেট’র আলাদা হওয়া অংশটির ওজন প্রায় ২১ টন। আগামী ১০ মে’র দু’দিন আগে বা পরে এটি পৃথিবীতে অবতরণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। আর একবার এটি পৃথিবীতে ফিরে আসার দিনটি স্পষ্ট জানা গেলে তা অবতরণ ঠিক কখন করবে তা ছয় ঘণ্টা আগেই অনুমান করা যাবে।