fbpx

`ছুটির ঘণ্টা’ খ্যাত পরিচালককে দেওয়া হয়নি কোন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, আক্ষেপ মেয়ের

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

‘ছুটির ঘণ্টা’ খ্যাত নির্মাতা আজিজুর রহমান ১৪ মার্চ কানাডার একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

গত ২১ মার্চ, বৃহস্পতিবার জানাজা শেষে মরহুমকে দাফন করা হয় জন্মস্থান বগুড়ার গ্রামের বাড়ি শান্তাহারে পারিবারিক কবরস্থানে। মৃত্যুকালে আজিজুর রহমানের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

কিংবদন্তী এই নির্মাতার রুহের মাগফেরাত কামনায় ১২ এপ্রিল বিকেল ৪টায় বিএফডিসির জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি আয়োজিত এ স্মরণ সভায় উপস্থিত থেকে নির্মাতা আজিজুর রহমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন অভিনেতা আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, ওমর সানী, অভিনেত্রী সুজাতা, চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, আব্দুল লতিফ বাচ্চু, কাজী হায়াৎ, মনতাজুর রহমান আকবর, শাহিন সুমন। এছাড়াও  আজিজুর রহমানের মেয়ে বিন্দি রহমান বাবাকে নিয়ে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান।

বিন্দি রহমান বাবাকে নিয়ে কথা শুরুর আগেই বলে নেন তিনি এভাবে বক্তব্য দেওয়াতে অভ্যস্থ নন। তাই বক্তব্য লিখে নিয়ে এসেছেন।

বক্তব্যে বিন্দি বলেন, ‘আমার বাবা জনাব আজিজুর রহমান একজন প্রকৃত মানুষ ছিলেন, যিনি অনেক পরিশ্রম করে এই পর্যায় পৌঁছেছিলেন। বাবা ছিলেন কাজ পাগল একজন মানুষ। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তাকে দেখেছি কাজের মাঝে ডুবে থাকতে। তিনি কখনো টাকার জন্য কাজ করতেন না। উনি বলতেন “আমি টাকার পেছনে ছুটবোনা, এতো ভালো কাজ করবো যে , টাকা আমার পেছনে ছুটবে”। আসলেই তাই, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবিগুলো তিনি বনিয়েছেন। তার প্রতিটা ছবি ছিল বক্তব্যধর্মী। এভাবেই তিনি এই জগতে হয়ে উঠেছিলেন একজন কিংবদন্তী।

চলচ্চিত্র জগতে যারা কাজ করেন, তাদের অনেক শ্রম এবং সময় দিতে হয়। বাবা বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের জন্য অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন। তিনি তার সারা জীবন চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যয় করেছেন। ব্যতিক্রমধর্মী গল্প, নিরলস পরিশ্রম আর নতুন প্রযুক্তির উপর গবেষণা তার ছবিগুলোকে নিয়ে গেছে অন্য এক মাত্রায়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো তাইতো আলোচনায় আছে যুগের পর যুগ।

বিন্দি রহমান আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে আমার বাবার কোন আক্ষেপ ছিলনা। উনি নিজ হাতে উনার পরিপূর্ণতার কথা লিখে রেখে গেছেন। কিন্তু সন্তান হিসেবে আমাদের আক্ষেপ রয়েছে। ৫২টি চলচ্চিত্রর নির্মাতা তিনি। যিনি একাধারে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, একজন অংকন শিল্পী, প্রযোজক, কাহিনিকার, পোস্টার মেকার, সেট ডিজাইনার, টাইটেল মেকার, মেকাপ আর্টিস্ট। তিনি একজন ভর্সেটাইল পর্সোনালিটির মানুষ হয়েও একবারও জাতীয় কোন পুরস্কার পেলেন না। পেলেন না একটি আজীবন রাষ্ট্রীয় সম্মানও। এর দায়ভার কি রাষ্ট্র নিতে পারবে?’

বিন্দি রহমান আরও বলেন, ‘উনি চলচ্চিত্রকে এতোই ভালোবাসতেন যে জীবনের শেষ দিনগুলোতে চলচ্চিত্রের মানুষদের কল্যাণের জন্য কিছু কথা নিজ হাতে লিখে রেখে গেছেন এবং পরিকল্পনা করেছিলেন একটি ছাত্রবৃত্তির ব্যবস্থা করার। সবার সহযোগিতা পেলে উনার সন্তান হিসেবে আমরা উনার স্বপ্নের এবং পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে চাই।’

এসময় বিন্দির কথার সূত্র ধরে সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘আমি জানি না এত ভালো কাজের পরও কেনো আজিজুর রহমানকে সরকারীভাবে কোনো সম্মাননা দেওয়া হয়নি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাবো নির্মাতা আজিজুর রহমানকে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দেওয়া হয়।’

এসময় উপস্থিত সকলেই আজিজুর রহমানের কাজের প্রশংসা করেন। মানুষ হিসেবে তিনি কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন সেটা উল্লেখ করতে কেউ ভোলেন না।

উল্লেখ্য, নির্মাতা আজিজুর রহমান অসংখ্য কালজয়ী সিনেমা নির্মাণ করেছেন। তবে তার ‘ছুটির ঘণ্টা’ সিনেমাটি ইতিহাস হয়ে আছে বাংলা সিনেমা জগতে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply