fbpx

জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের কেউ বউ হিসেবে চায় না: ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের  দাবিতে চলা আন্দোলনে এক অডিও ক্লিপ আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরের  মেয়েদের কেউ বউ হিসেবে চায় না, কেননা এরা সারারাত বাইরে ঘোরাফেরা করে।‘

তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই মন্তব্য করা ফরিদ আহমেদের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী   ও শিক্ষকরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান শেখ আদনান ফাহাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের মানসিকতা হবে আকাশের মতো বড়। সেই জায়গা থেকে একজন উপাচার্যের এ ধরনের মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না। এটা আমাকে ও আমার সকল শিক্ষার্থীদের অনেক ব্যথিত করেছে। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে শাবিপ্রবির ভিসির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই।‘

শুধু শিক্ষকই নন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাও এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মারুফ মল্লিক এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘জাবি নিয়ে শাবির শিক্ষকদের বালখিল্য আচরণ ও মন্তব্য হীনমনত্যা আর কিছুই না। এ থেকে তারা বেরিয়ে আসনে না পারলে শাবি আসলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই পরিণত হতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় মানে কেবল সার্টিফিকেট প্রদান করা না। কিন্তু দু:খ জনক হলেও সত্য শাবির শিক্ষকরা ইনফরমাল প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের মত  আচরণ করছেন। এসব করতেই থাকলে বরং কওমি মাদ্রাসাগুলো শাবি থেকে এগিয়ে যাবে।‘

তানজিদ বাসুনিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের সম্পর্কে সাস্টের উপাচার্যের মন্তব্য শুনেছি। আমার মনে হয়েছে ওই লোকটার মানুষিক দৈন্যতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তো নয়ই, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারে কাছে যাওয়ারও যোগ্যতা রাখেন না। তবে বাস্তবতা টাও আমাদের মেনে নিতে হবে। মেধা ও যোগ্যতা ছাপিয়ে তেলবাজি প্রাধান্য পাওয়ায় এই যুগে এমনটা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক!

অথচ আমরা জানতাম একজন উপাচার্য হবেন মেধা, মনন ও প্রজ্ঞায় অনন্য!

মিস্টার ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, স্যরি টু সে, বাট দ্যা ফ্যাক্ট ইজ ইউ আর এ জার্ক। প্রেয়িং ফর ইউর কুইক রিকভারি ফ্রম মেন্টাল ইলনেস!

বর্তমানে এই ভিডিও প্রায় সবার ফেসবুকের নিউজফিডে অডিও ক্লিপটি ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। যারা এই  অডিওটি ফাঁস করেছেন তাদের দাবি, এটি শাবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের। এই অডিওতে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের রাতে বাইরে থাকা নিয়ে কটাক্ষ করছেন।

শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা তার ওই অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেন। উপাচার্যের সঙ্গে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন তিন শিক্ষার্থীও অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেন।

তারা জানান, ২০১৯ সালে আবাসিক হলের গেট রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন করেছিলেন। তখন আন্দোলনকারী ছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এসব মন্তব্য করেছিলেন এই উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রী জানান, এই অডিও ক্লিপের বক্তব্য শুনেই বোঝা যায়, উপাচার্য কতটা নিচু মানসিকতার। তিনি মেয়েদের প্রতি কী ধারণা পোষণ করেন। তার এই বক্তব্য সব খানে ছড়িয়ে পড়া দরকার। এতে মানুষ বুঝতে পারবে আমরা কেন তার পদত্যাগ চাই।

এই ক্লিপের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। আন্দোলনকারীরা তাকে বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। ফোনে যোগাযোগের একাধিক চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।

অডিওতে শোনা যায়, ‘যারা এই ধরনের দাবি তুলেছে, যে বিশ্ববিদ্যালয় সারারাত খোলা রাখতে হবে, এইটা একটা জঘন্য রকম দাবি। আমরা মুখ দেখাইতে পারতাম না। এখানে আমাদের ছাত্রনেতা বলছে যে, জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের সহজে কেউ বউ হিসেবে চায় না। কারণ সারারাত এরা ঘোরাফেরা করে। বাট আমি চাই না যে আমাদের যারা এত ভালো ভালো স্টুডেন্ট, যারা এত সুন্দর, এত সুন্দর ডিপার্টমেন্টগুলো, বিখ্যাত সব শিক্ষক… তারা যাদের গ্র্যাজুয়েট করবে, এরকম একটা কালিমা লেপুক তাদের মধ্যে।

জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের কেউ বউ হিসেবে চায় না: ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

‘ওই জায়গাটা কেউ চায় না, কোনো গার্ডিয়ানও চান না কিন্তু। এখন আমরা যদি কোনো মেয়েকে বলি তোমার বাবা-মা কাউকে ফোন করব, তখন তোমরাই তো এতে বাধা দিবা। না না না এইটা হবে না, দেখ হয়রানি করতেছে। কিন্তু এইটা তো প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। তোমাদেরও নৈতিক দায়িত্ব যে, এই মেয়ে কেন রাতের বেলা সোয়া দশটা পর্যন্ত স্যাররে সময় দিসে?’

জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের কেউ বউ হিসেবে চায় না: ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

ওই ক্লিপে আরও শোনা যায়, ‘আমি মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে যখন আসি, রাতে ১২টা-১টা বেজে যায়। আমি দেখি যে আমাদের ওয়ান কিলোমিটার রাস্তা দিয়া ছেলে-মেয়ে হাত ধরাধরি করে কনসালটিং করতাছে। একটা অঘটন ঘটে গেলে দায়দায়িত্ব ভাইস চ্যান্সেলরকে নিতে হবে। যত দোষ, নন্দ ঘোষ। ভাইস চ্যান্সেলর দায়ী সে জন্য।’

শাবিপ্রবির সুলতানা ইয়াসমিন নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘এটি উপাচার্যেরই কণ্ঠ। ছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে সে দিন তিনি এসব কথা বলেছিলেন।‘

‘২০১৭ সালে আমরা বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্রী হল ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার দাবিতে আন্দোলনে নামি। কারণ রাতে আমাদের অনেককে ল্যাবে যেতে হয়। টিউশনি থাকে। ৭টার মধ্যে হলে ফেরা সম্ভব হয় না।’

ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘টানা ১৯ দিন আন্দোলন করার পর উপাচার্য তার কার্যালয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেদিন এই কথাগুলো বলেছিলেন।’

শাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের জন্য বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply