করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ যখন পুরো পৃথিবীকে গ্রাস করেছে, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই এ বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে করোনা টিকার চাহিদাও বেড়েছে বিশ্বে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালাকে সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে টিকা পাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং আদর পুনাওয়ালা। আর এসব থেকে দূরে থাকতে তিনি এখন পরিবারসহ রয়েছেন লন্ডনে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সেরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি জানান, তাকে কোভিশিল্ড টিকার জন্য বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ আরো অনেক ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা ফোন করেছেন এবং দ্রুত টিকা পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আদর পুনাওয়ালা বলেন, ‘হুমকি বললেও কম বলা হবে। মানুষের আশা ও আগ্রাসনের মাত্রা অভূতপূর্ব। প্রতেকেই চায় সে যেন আগে টিকা পায়! কেউ বুঝতেই চাইছে না যে তাদের আগেও অন্য কারো টিকার বেশি প্রয়োজন হতে পারে।’
এসব চাপের মুখে পড়ে এক পর্যায়ে লন্ডনে চলে যান পুনাওয়ালা। তবে, ২৩ এপ্রিল ভারতীয় নাগরিকদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করার আগেই তিনি লন্ডনে পৌঁছেছেন বলে উল্লেখ করা হয় দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে।
সাক্ষাৎকারে সিইও আরও বলেন, ‘আমি লন্ডনে আরও কিছুদিন থাকবো। কারণ, ওই পরিস্থিতির মধ্যে আমি আর পড়তে চাই না। সবকিছু একা ঘাড়ে এসে পড়ায় আমি এটা আর বহন করতে পারছি না।’
তবে, টিকা পাওয়ার বিষয়ে চাপ ছাড়াও ব্যবসায়িক কারণে তিনি লন্ডন গেছেন এবং সেখানে থাকার সময়সীমা আরও বাড়িয়েছেন বলে জানান পুনাওয়ালা। তিনি ইঙ্গিত দেন, ভারতের বাইরে যুক্তরাজ্যেও টিকা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, গত বুধবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদর পুনাওয়ালাকে ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনের আওতায় এক থেকে দু’জন কমান্ডো ও পুলিশ সদস্যসহ নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও-এর নিরাপত্তার জন্য। দেশের যে কোন প্রান্তেই ভ্রমণের জন্য তাকে এই নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টিকা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে ৬০টি দেশে টিকা সরবরাহ করার জন্য চুক্তি করেছে। কিন্তু, ভারতের করোনা মহামারি বর্তমানে বিপর্যয়কর পর্যায়ে পৌঁছানোর কারণে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশেরও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চুক্তি রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে। যার সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা ছয় মাসে পাওয়ার কথা ছিল। যার মধ্যে জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ আর ফেব্রুয়ারিতে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসে। এরপর বাংলাদেশে সেখান থেকে আর কেনা টিকা আসেনি।
এ বিষয়ে সেরাম ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ভারতের করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে নিজেদের বিশাল জনগোষ্ঠীর টিকাদান নিশ্চিত করতে টিকা রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত সরকার।