ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে সাতক্ষীরা ও খুলনায় কাফনের কাপড় পড়ে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। এসময় ত্রাণ নয়, ভিক্ষা নয়, টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানায় তারা।
শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পাতাখালি পয়েন্টের যে বেড়িবাঁধটি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে ভেঙে গেছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এসময় ‘আমরা ভাসতে চাই না, বাঁচতে চাই’, ‘একবারই মরব, বারবার নয়’, ‘উপকূলের কান্না, শুনতে কি পান না’ বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
অবস্থান কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেওয়া ‘ম্যানগ্রোভ স্টুডেন্ট সোসাইটি’র সভাপতি আরিফুল ইসলাম জানান, ‘গত ১২ বছর ধরে উপকূলের বাসিন্দারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছে খুব অসহায়ভাবে। প্রতিবারই প্রশাসনের কর্মকর্তারা টেকসই বাঁধ নির্মান ও মেগা প্রকল্পের আশা দেখান। কিন্তু কখনই কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে ব্যর্থ হলে সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন, আমরা বারবার নয়, একবারই মরতে চাই।’
এদিকে খুলনা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করে বাসিন্দারা। এসময় তারা ‘ত্রাণ নয়, ভিক্ষা নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’ স্লোগান দেন।
দক্ষিণবঙ্গ স্বেচ্ছাসেবী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘উপকূলের মানুষকে জিম্মি করে বাঁধ ভাঙার আশায় থাকেন এক শ্রেণির অসাধু জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারেরা। বাঁধ মেরামতের নামে তাঁরা লাখ লাখ টাকা লোপাট করেন।‘
উপকূলীয় এলাকার মানুষকে বাঁচাতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানায় নগরের বাসিন্দারা।
তারা বলেন, ‘ষাটের দশকের নির্মান করা বেড়িবাঁধ অর্ধশত বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। এ কারণে সামান্য ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের কথা শুনলেই আঁতকে ওঠে উপকূলের মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলের মানুষ ঝড়কে ভয় পায় না, ভয় পায় বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়াকে।‘
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর এবং খুলনার দাকোপ ও কয়রা এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই বছরই টেকসই বাঁধ নির্মাণের কথা জানালেও এক যুগ পেরিয়ে গেছে, কোনো আশার আলো দেখেনি বলে অভিযোগ করে সাতক্ষীরা ও খুলনার মানুষ।
শুধু আশ্বাস দিয়ে নয়, এবার কার্যকরী উদ্যোগ ও তার সঠিক বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে এই দুই জেলার বাসিন্দারা।