fbpx

ঢাকা সিলেট রেল পথেই কেন এতো দুর্ঘটনা?

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

দেশে যতগুলো ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় সবই হয়েছে ঢাকা সিলেট রেলপথেই। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় সংস্কারের অভাবে জীর্ণ দশায় চলে যাওয়া রেল পথে কয়েকদিন পরপর লাইনচ্যুত হয় ট্রেন। এদিকে রেলকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার কারণটাও কিন্তু কম যায়না। নভেম্বরে চারদিনের ব্যবধানে দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয় এর রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল হবিগঞ্জের মাধবপুরে ফের লাইনচ্যুত হয় একটি তেলবাহী ট্রেন। এবং এই ঘটনায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

২০১৯ সালে এ রেলপথে দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২১ যাত্রী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল নভেম্বরে। ওই ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। আহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যায়। দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় ট্রেন দুটির বগি-ইঞ্জিন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রেলপথ। এর আগে ২০১৯ সালের ২৩ জুন, অর্থাৎ কসবার দুর্ঘটনার পাঁচ মাস আগে সেতু ভেঙে লাইনচ্যুত হয়ে পানিতে পড়ে যায় উপবন এক্সপ্রেসের একটি বগি। চারজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ওই দুর্ঘটনায় আহত হন অন্তত ৬৪ যাত্রী।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায় ঢাকা সিলেট রেলপথে সিলেটের আখাউরা অংশে প্রায় প্রতি মাসেই ঘটছে একাধিক দুর্ঘটনা আর এর বেশির ভাগই লাইনচ্যুতির ঘটনা।

এর মধ্যে ২০১৯ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু লাইনচ্যুতির ঘটনাই ঘটেছে নয়টি। ওই বছরের ১৬ মে ফেঞ্চুগঞ্জে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন, ২ জুন শায়েস্তাগঞ্জে কুশিয়ারা এক্সপ্রেস, ২০ জুলাই একই স্থানে কালনী এক্সপ্রেস, ১৯ জুলাই কুলাউড়ায় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ৪ সেপ্টেম্বর ও ১৬ আগস্ট একই এলাকায় উপবন এক্সপ্রেস, ১৭ সেপ্টেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জে জালালাবাদ এক্সপ্রেস, ৪ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জালালাবাদ এক্সপ্রেস, ২৯ ডিসেম্বর কুলাউড়ার বরমচালে একটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এছাড়া মুখোমুখি সংঘর্ষ ও সেতু ভেঙে বগি পানিতে পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও রয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুরে তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনায় রেলকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা থাকতে পারে, এ ছাড়াও যে স্থানে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে সেখানে রেলপথ সংস্কারের কাজ চলছিল। কিছু রেলপথ তুলে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু নিয়ম হলো কোথাও লাইনের কাজ হলে তার দুপাশেই রেড সিগন্যাল থাকবে, সে বিষয়ে দুই প্রান্তের স্টেশন মাস্টারকে অবহিত করা হয় তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে।

দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় ঢাকা সিলেট রেলপথের আখাউড়া অংশে কেন এত দুর্ঘটনা হয় ,এ প্রশ্নের জবাবে সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এই সেকশনটির অনেক স্থানে একটা ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হয় না প্রয়োজন হলে ট্রেনের পেছনে আরও একটি ইঞ্জিন জুড়ে দিয়ে ট্রেন টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা করতে গিয়ে অনেক সময় ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তখন লাইনচ্যুতির মতো ঘটনা ঘটে।’

রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত রেলপথটি বেশ পুরনো। রেলপথটি সংস্কার করে বিদ্যমান মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করার জন্য একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। নতুন করে রেলপথটি বানানো হলে ঢাকা-সিলেট রুটের যাত্রীরা উন্নত ও নিরাপদ রেলসেবা পাবেন।

সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছর সারা দেশ সব মিলিয়ে ৯১টি ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি ছিল মুখোমুখি দুর্ঘটনা। লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছিল ৭৮টি। অন্যদিকে ২০১৯ সালে সব মিলিয়ে ১২৯টি ট্রেন দুর্ঘটনা হয়। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত হন দেড় শতাধিক যাত্রী।

Advertisement
Share.

Leave A Reply