fbpx

তবু আমারে দেব না ভুলিতে……

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

দেখিবে, কে যেন ম’রে পরে আছে

তোমার পথের ধূলিতে।

তবু আমারে দেবনা ভুলিতে।

আমি চিরতরে দূরে চলে যাব,

তবু আমারে দেবনা ভুলিতে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম পৃথিবীর মোহমায়া ত্যাগ করে চলে গেলেও তাঁর রচিত শিল্পকর্মের মাধ্যমে কোটি মানুষের মনে চির অমর হয়ে আছেন। ঠিক যেনো তাঁর রচিত ওই গানের মতোই কাউকে ভুলতে দেন নি কবি।

আজ ১২ ভাদ্র, ২৭ আগস্ট। জাতীয় কবি কাজী নজ্রুল ইসলামের ৪৫তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) সবাইকে অঝোরে কাঁদিয়ে পাড়ি জমান পরপারে।

কবির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, মসজিদেরই পাশে সমাহিত করা হয় তাঁকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে কবর দেওয়া হয়।

তবু আমারে দেব না ভুলিতে……

আজকের এ দিনে কবিকে নানা আয়োজনে স্মরণ করবে দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দিনে কবিকে স্মরণ করছে।

১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে, ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। তার ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।

কবি ছিলেন প্রচন্ড রকমের ডানপিটে আর দুরন্ত। তিনি অন্যায়ের কাছে কখনো হার মানেন নি। এজন্য জেলও খেটেছেন বার বার।

বাংলা ভাষা সাহিত্য অনুরাগীদের কাছে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি কবিতা, সংগীত, উপন্যাস, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, চলচ্চিত্রে নিজের প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন। একইসঙ্গে ছিলেন সাংবাদিক, গায়ক এবং অভিনেতাও। সংগীতে তার অজস্র রাগ-রাগিনী অমরত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে আছে।

কবির লেখনীতে বার বার উঠে এসেছে নিরীহ, নিপীড়িত অসহায় মানুষের কথা। দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল।

তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।

তিনি ছিলেন চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’

বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই ধূমকেতুর মতো। হঠাৎ করে একদিন তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়ে সমস্ত আকাশকে কিভাবে রাঙিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হতে পারে।

তবু আমারে দেব না ভুলিতে……

বাংলাদেশে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে সপরিবারে স্বাধীন বাংলাদেশে আনা হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তনে কবিকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে নজরুলকে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply