fbpx

তৃতীয় পক্ষকে দেওয়া মুনাফা দিয়ে ৬৮ লাখ টিকা কেনা যেতো: টিআইবি

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

টিকা কিনতে গিয়ে সরকার তৃতীয় পক্ষকে ২৩১ কোটি টাকা মুনাফা দিয়েছে, যা দিয়ে আরও ৬৮ লাখ কোটি ডোজ কেনা সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘সরকার টিকার জন্য একটি মাত্র উৎসের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এই সিদ্ধান্ত যে ঠিক হয়নি, সেটি এখন প্রমাণিত। টিকা সংগ্রহের জন্য তৃতীয় পক্ষকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষকে লাভবান করা হয়েছে। আর তার বোঝা বইতে হচ্ছে জনগণকে।’

মঙ্গলবার ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে ৩১ মে ২০২১ তারিখ পর্যন্ত এই গবেষণা পরিচালনা করে টিআইবি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক গৃহীত টিকা কার্যক্রমসহ অন্যান্য চলমান কার্যক্রম সুশাসনের আঙ্গিকে পর্যালোচনা করাই এ গবেষণার উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

গবেষণায় কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে বেশকিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে টিআইবির মাঠ পর্যায়ে চালানো গবেষনায় পর্যাবেক্ষণে।

১. করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা,

২. নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় প্রণোদনা বিতরণে যথাযথ উদ্যোগের ঘাটতিসহ সমন্বয়হীনতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে।

৩. আইনের লঙ্ঘন করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টিকা আমদানির মাধ্যমে জনগণের টাকা হতে তৃতীয় পক্ষের লাভবান হওয়া সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

৪. কৌশলগত ঘাটতি, ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রভাব ও রাজনৈতিক বিবেচনায় টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে একক উৎসের ওপর নির্ভর করার কারণে চলমান টিকা কার্যক্রমে আকস্মিক স্থবিরতা নেমে এসেছে।

৫. টিকাদান পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সমন্বয়ের ঘাটতি, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীকে পরিপূর্ণভাবে টিকার আওতায় আনার ক্ষেত্রে উদ্যোগের ঘাটতি ও সম প্রবেশগম্য টিকা কার্যক্রম নিশ্চিত না করার ফলে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ ও সুবিধাবঞ্চিত অনেক জনগোষ্ঠী টিকার আওতার বাইরে রয়ে গিয়েছে।

৬. টিকার নিবন্ধন ব্যবস্থা সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর অনুকূলে হওয়ার কারণে এলাকা, শ্রেণি, লিঙ্গ ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে, যা সর্বজনীন টিকাদান কর্মসূচির অর্জনকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে।

৭. সর্বোপরি করোনা মোকাবিলা ও টিকা কার্যক্রমে সুশাসনের ঘাটতি করোনাভাইরাস নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণকে দীর্ঘায়িত করছে।

পর্যবেক্ষণের বিপরীতে টিআইবির গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে বেশকিছু সুপারিশ।

১. দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে কীভাবে কত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করতে হবে।

২. সম্ভাব্য সকল উৎস হতে টিকা প্রাপ্তির জন্য জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।

৩. উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের সুযোগ দিতে হবে।

৪. সরকারি ক্রয় বিধি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির অনুমতি প্রদান করতে হবে।

৫. রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ব্যতীত টিকা ক্রয় চুক্তি সম্পর্কিত সকল তথ্য সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

৬. পেশা, জনগোষ্ঠী ও এলাকাভিত্তিক সংক্রমণের ঝুঁকি, আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার সমভাবে বিবেচনা করে অগ্রাধিকার তালিকা হতে যারা বাদ পড়ে যাচ্ছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৭. সুবিধাবঞ্চিত ও প্রত্যন্ত এলাকা বিবেচনা করে টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও টিকা দান কার্যক্রম সংস্কার করতে হবে।

৮. ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন ও তৃণমূল পর্যায়ে টিকা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

৯. সকল কারিগরি ত্রুটি দূর করাসহ সকলের জন্য বিভিন্ন উপায়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিতে হবে (যেমন এসএমএস এর মাধ্যমে, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে)।

১০. সকলের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন কার্ড প্রিন্ট করার নিয়ম বাতিল করতে হবে।

১১. এলাকাভিত্তিক চাহিদা যাচাই করে টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

১২. টিকা প্রদান কার্যক্রমে টিকা কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।

১৩. টিকা কেন্দ্রে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।

১৪. অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে হবে ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৫. কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির ক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে তদন্ত ও দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৬. কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত প্রকল্পসমূহ দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এর অগ্রগতির চিত্র প্রকাশ করতে হবে।

১৭. স্টোরে ফেলে রাখা আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অতি দ্রুততার সাথে ব্যবহারযোগ্য করতে হবে এবং সংক্রমণ হার বিবেচনা করে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতে হবে।

১৮. সকল জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার স্থাপন করতে হবে।

১৯. বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউসহ কোভিড-১৯ চিকিৎসার খরচ সর্বসাধারণের আয়ত্তের মধ্যে রাখতে চিকিৎসা ফি’র সীমা নির্ধারণ করতে হবে।

২০. জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি পালন করাতে বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আচরণ পরিবর্তনমূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নিতে হবে।

২১. মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে বলবৎকরণের উদ্যোগ নিতে হবে।

২২. সকল জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার পূর্বে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবন-জীবিকার সংস্থান করে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক ‘লকডাউন’ দিতে হবে।

২৩. সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাসহ নিষেধাজ্ঞার আওতা নির্ধারণ করতে হবে।

২৪. সরকার ঘোষিত প্রণোদনা অতি দ্রুততা ও স্বচ্ছতার সাথে বিতরণের উদ্যোগ নিতে হবে।

এই গবেষণা প্রতিবেদনে উপস্থাপিত প্রাপ্ত তথ্য করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অন্যান্য অংশীজনের সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়, তবে উপস্থাপিত তথ্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা, অনিয়ম ও দুর্নীতির সম্পর্কে একটি ধারণা দেয় বলেও জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি।

Advertisement
Share.

Leave A Reply