fbpx

‘দিন, দ্য ডে’ সিনেমার বাজেট ১০০ কোটি নয়, ৫ কোটি টাকা: ইরানি পরিচালকের দাবি

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

দেশের কোন সিনেমার বাজেট ১০০ কোটি টাকা, এটা শুনেই বাংলাদেশের দর্শক অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো কবে আসবে সেই সিনেমা। অনন্ত জলিল বাংলাদেশের সিনেমাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন বলেই সবাই বিশ্বাস করছিলেন।

মুক্তি পাওয়ার পর বেশ ভালোই সাড়া পেয়েছিলো সিনেমা ‘দিন, দ্য ডে’। কিন্তু হাটে হাড়ি ভেঙে দিলেন সিনেমার প্রযোজক ইরানি নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজম।

প্রথম থেকেই অনন্ত বলে আসছিলেন এই সিনেমার বাজেট ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু চুক্তিপত্রে সিনেমাটির বাজেট হিসেবে উল্লেখ আছে ৫ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমান দাঁড়ায় ৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। সিনেমার বাজেটের চুক্তিপত্রটি নিজের ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করেছেন দিন- দ্য ডে’র ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম।

সোমবার রাতে ইনস্টাতে বাংলায় তার দ্বিতীয় বিবৃতি এবং চুক্তিপত্র প্রকাশ করেন। চুক্তিপত্রে সিনেমার সর্বমোট বাজেটের অর্থ ৬টি কিস্তিতে জমজমকে পরিশোধের কথা অনন্ত জলিলের।

চারদিন আগেই জমজম ইনস্টাতে আরেক পোস্টে দাবি করেন, তিনি ও অনন্ত যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা ভেঙেছেন অনন্ত। ইরান ও বাংলাদেশের আদালতে অনন্তর বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানান জমজম। কিন্তু জমজমের এই অভিযোগ তখন অস্বীকার করেন অনন্ত জলিল। এখন দেখার বিষয়, এবার কী জবাব দেন অসম্ভবকে সম্ভব করা অনন্ত জলিল।

ইনস্টাগ্রামে ছয়টি স্লাইডে জমজম তার বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অগণিত সংস্কৃতিমনা প্রিয় মানুষ ও মিডিয়া ব্যাক্তিত্বদের ভালোবাসা মিশ্রিত ক্ষুদে বার্তা ও সহযোগিতায় আমি অভিভূত। আমি বিশ্বাস করি সংস্কৃতির নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ কোনো প্রকারের জাতীয়তা ও কাঁটাতারের সীমানায় আবদ্ধ থাকে না। বিভিন্ন মাধ্যমে, যেসব বন্ধুরা আমাকে বার্তা পাঠিয়েছেন, আমি এবং আমার ইরানি টিমের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। প্রত্যেকের বার্তার জবাব দিতে পারিনি, সে জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এই চার বছরে, আমি নিরবে ও সম্মানের সঙ্গে এই প্রকল্পটি ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম।

কিন্তু এখন আমি জনাব অনন্ত জলিলের অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের কাছে, সংক্ষিপ্তাকারে, কিছু বিষয় উপস্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছি। কয়েকজন বন্ধু উনাকে বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সুপারস্টার হিসেবে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

তিনি আরও বলেন, ‘জনাব অনন্ত জলিল তার আগের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর ভিডিও ফুটেজ ও মানুষের অভ্যর্থনা ভিডিওচিত্র দেখানোর মধ্য দিয়ে আমাকে বলেন যে, তার সর্বশেষ মুভিটি প্রায় দুই মিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে। উনার সর্বশেষ মুভিটি দেখার পর আমার বিশ্বাস ছিল যে, পেশাদার ইরানি টিম নিয়ে আমরা এর থেকেও আরও অনেক অনেক ভালো একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারব। যার ফলে আমি এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিলাম।

অবশ্য, আমার জন্যও ইরানের পরিবেশে একটা ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করা চ্যালেঞ্জিং ও আকর্ষণীয় ছিল। ‘দিন, দ্য ডে’ চলচ্চিত্রের চুক্তিপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল যে, জনাব অনন্ত জলিলের অর্থায়নে সিনেমাটি তৈরি হবে (কারণ এই ধারার চলচ্চিত্র ইরানের জনগনের পছন্দের না)। এবং সেই সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্পষ্টতঃ তার নামটি এই চলচ্চিত্রের বিনিয়োগকারী ও অভিনেতা হিসেবে, এবং আমার নামটি প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।

এরপর তিনি লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্রটির চুক্তি ও বাজেটের পরিমাণ $৫০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ মার্কিন ডলার) ছিল। অর্থাৎ আমরা ইরানি টিম কাজ করব এবং তিনি টাকা খরচ করবেন। এবং পরিশেষে চলচ্চিত্রের লভ্যাংশের ৮৫% বিনিয়োগকারীকে ও ১৫% প্রযোজক হিসেবে আমাকে দেয়া হবে। অবশ্য, আপনারা ডে সিনেমার বাজেট ঘোষণায় উনার দাবির পরিমাণ স্পষ্টভাবে দেখে থাকবেন। তিনি ডে সিনেমার নির্মাণ ব্যয় দশ মিলিয়ন ডলার প্রচার করেছেন। যদিও তিনি এখন পর্যন্ত খরচের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার পুরোটা পরিশোধ করেননি। যেখানে কি-না দশ মিলিয়ন ডলারের দাবী, মূল বাজেটের প্রায় ত্রিশ গুণ বেশি দাবি। দুর্ভাগ্যবশত, শুটিং শুরুর দিনগুলোতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এটি আমার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু চুক্তির কারণে আমার ফিরে আসার কোনো পথ ছিল না।

আমি চাইনি আমার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়ে যাক। উনার ক্রমাগত স্ক্রিপ্ট পরিবর্তন, যেমন- গল্পে আইএস জঙ্গিবাদ ইস্যু থেকে মাদক ও মাফিয়া ইস্যুতে পরিবর্তন, চিত্রায়ণের স্থান সিরিয়া ও লেবানন থেকে পরিবর্তন করে আফগানিস্তান ও তুরস্কে নিয়ে যাওয়া, এইসবের মধ্য দিয়ে আমাদের মতপার্থক্যের শুরু হয়। যেহেতু চলচ্চিত্রটির ৮৫% বাংলাদেশের এবং তিনি বলতেন বাংলাদেশের সিনেমা ও মানুষদের আমার চাইতে ভালো জানেন, এই অজুহাতে প্রতিদিন চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্টে ও অভিনয়ে হস্তক্ষেপ করতেন। সিনেমায় তার হস্তক্ষেপ ছাড়াও চিত্রগ্রহণের দিনগুলোতে বিলম্ব ঘটাতেন। তিনি আমাকে সম্পূর্ণ এবং সময়মতো চলচ্চিত্রে বাজেটের টাকাও পরিশোধ করতেন না। এবং এই কারণে চলচ্চিত্রের কাজে আমার ঋণ ও চিত্রগ্রহণের ব্যয় প্রতিদিন বেড়ে চলছিল। তার অদ্ভুত ও অপেশাদার আচরণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, আমি তাকে বলেছিলাম ও লিখেছিলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত উনি ঋণ পরিশোধ না করবেন, আমি প্রকল্পটির কাজ আর চালাব না–বলেন, জমজম।

জমজম লিখেছেন, ‘উনি আমার ঋণ পরিশোধ ছাড়া ও অনুমতি ব্যতীত, নিজে অপেশাদারিত্ব দেখিয়ে চলচ্চিত্রটির প্রযোজক ও পরিচালক সেজে তুরস্কে চিত্রগ্রহণ করেছেন। এমনকি এখন আমি লক্ষ্য করেছি যে, তিনি তুরস্কের কিছু চিত্রায়ণে নারীদের অশালীন নৃত্য দেখিয়েছেন। যা কি-না সম্পূর্ণ চুক্তির বিরুদ্ধে। কারণ চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোর মধ্যে একটি হলো দুই দেশের আইনকে সম্মান করা। কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার কিছু সময় পর কয়েকজন বন্ধুর মধ্যস্ততায় আমাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। এবং তিনি আমাকে মৌখিক ওয়াদা দেন যে, ভাই! আমি আপনার টাকা পরিশোধ করব। যেহেতু আমিও ইরানের চলচ্চিত্র কলাকুশলীদের কাছে অনেক ঋণগ্রস্থ ছিলাম, তাই আমাকে পুনরায় তার বন্ধুত্বের উপর আস্থা রাখতে হয়েছে। পরবর্তীতে, তিনি আমাকে টাকার আশ্বাস দিয়ে দুই দফা ভারতের হায়দ্রাবাদে ও বাংলাদেশে নিয়ে যান। এবং বাংলাদেশে দুই লক্ষ মার্কিন ডলারের পরিবর্তে চব্বিশ হাজার মার্কিন ডলার দেনা পরিশোধ করেন, যার স্বাক্ষী-প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে এবং আমি তা সময় মতো আদালতে উপস্থাপন করব।

আমি উনার কাছে পুনরায় পাওনা টাকা চাইলে, তিনি করোনা ও কোম্পানির লোকসান দেখিয়ে, পরিশোধ করা হতে বিরত থাকেন।

Advertisement
Share.

Leave A Reply