fbpx

দেশে ১ মাসের ডিজেল ও ১৮ দিনের পেট্রোল মজুদ আছে: বিপিসি চেয়ারম্যান

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বর্তমানে দেশে এক মাসের ডিজেল, ১৮ দিনের পেট্রোল ও ৩২ দিনের জেট ফুয়েল রয়েছে। এছাড়া দেশে যে অকটেন মজুত রয়েছে, তা দিয়ে ১৮ থেকে ১৯ দিনে চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ  পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিপিসির চেয়ারম্যান এ তথ্য জানান।

তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানোর পর বিপিসির ২০১৪ সালের পর থেকে মুনাফায় থাকা, বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের বিপুল পরিমাণ স্থায়ী আমানতের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর এ নিয়ে তুমুল আলোচনার পর এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন তিনি।

দেশে উৎপাদন হলেও পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্রুডের কারণে পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ে। সুতরাং পেট্রোল ও অকটেনের দাম কৌশলগত কারণে বাড়াতে হয়েছে।’

বর্তমানে দেশে ৩০ দিনের ডিজেল এবং ১৮ দিনের পেট্রোল ও অকটেন মজুত আছে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখন ডিজেল বিক্রি করে তাদের প্রতি লিটারে ৬ টাকা লোকসান গুণতে হলেও অকটেনে প্রতি লিটারে লাভ হচ্ছে ২৫ টাকা। তবে সরকারি দরে ডলার কিনলে এবং জুলাই মাসের মতো বিক্রি হলে শুধু ডিজেল-অকটেন থেকে প্রতি মাসে ২০৫ কোটি টাকা মুনাফা হতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন নিম্নমুখী তখন কেন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেন- এ প্রশ্নে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্লাটসের (জ্বালানি সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান) হিসাবে, পহেলা অগাস্ট প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১৩২ ডলার ৭৩ সেন্ট। কমে সেটা ৮ অগাস্ট ১১৮ ডলার ৫০ সেন্ট। গড়ে ১২৬ ডলার ৫৯ সেন্ট। এর সঙ্গে প্রতি ব্যারেলে ১১ ডলার প্রিমিয়াম, ট্যাক্স-ভ্যাট, ডিলার কমিশন যোগ হবে।

‘এই আটদিনের তথ্যে, ছয় তারিখে যখন মূল্য নির্ধারিত হয়, তখন গত জুলাই মাসের গড় হিসাবে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আটদিনের গড় হিসাব ধরলে আমার প্রতি লিটার (ডিজেল) পড়ে ১২০ টাকা ১৬ পয়সা। এই হিসাবে আমাদের এখনও ৬ টাকা লোকসান আছে।’

পেট্রোল ও অকটেনে লাভ কত হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই আট দিনের গড় যদি করি, ২৫ টাকার মতো লাভ থাকছে অকটেনে। যেহেতু পেট্রোল ৫ টাকা কম রাখছি। সেহেতু কিছুটা কম হলেও হতে পারে।’

বিপিসির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে সংস্থার আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরা হয়।

আজাদ বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি যে ৪২ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, এরমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়, সরকারকে লভ্যাংশ ও উদ্বৃত্ত তহবিল হিসেবে দেওয়া, এনবিআরের বকেয়া পরিশোধ, মূলধনী বিনিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। অবশিষ্ট থাকে ২২ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রভিশনাল হিসাব অনুযায়ী, বিপিসির লোকসান প্রায় ৫ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর হতে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর এই ১৪ বছরে বিপিসির লোকসান হয় ৫৩ হাজার ৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকার বিভিন্ন সময়ে বিপিসিকে দেয় ৪৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। বাকি ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকা বিপিসির মুনাফার সঙ্গে সমম্বয় করা হয়।

জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ করার জন্য বিপিসিকে দুই মাসের জ্বালানি তেলের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ (২৫% বৃদ্ধিসহ) চলতি মূলধন হিসেবে রাখতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেলে বিপিসির মূলধনও বাড়াতে হয়। ২০২০-২১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল তুলনামূলক ‘সহনশীল’ থাকায় ওই সময় বিপিসির ১২ হাজার কোটি টাকা চলতি মূলধন রাখা হত বলে জানান তিনি।

পরে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপিসির চলতি মূলধনের উপর চাপ পড়ে উল্লেখ করে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, তেলের মূল্য সমন্বয়ের আগে তেল বিক্রি ও অন্যান্য খাতে বিপিসির মাসিক গড় জমা ছিল সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি বছরের জুনে ৭ হাজার ১৭১ কোটি, জুলাইয়ে ১০৩১২ কোটি টাকা পেমেন্টে করা হয়েছে এবং অগাস্টে ৯ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা পেমেন্ট প্রাক্কলন করা হয়েছে।

এজন্য বিপিসির ২০ হাজার কোটি টাকার চলতি মূলধন প্রয়োজন। এদিকে ফেব্রয়ারি থেকে জুলাই সময়ে বিপিসির অনেক এফডিআর নগদায়ন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে চলতি মুলধন, রিজার্ভ তহবিল, উন্নয়ন তহবিল, অবচয় তহবিলসহ বিভিন্ন খাতে বিপিসির কাছে মোট ১৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার তহবিল আছে। এরমধ্যে ৭ হাজার ৭৪ কোটি টাকা রয়েছে চলতি মূলধন, যা যথেষ্ট নয়। সেই কারণে ইস্টার্ণ রিফাইনারি-২ তে রাখা ৭ হাজার ৩৬১ কোটির মধ্যে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা নগদায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং বিপিসি ৩৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলেও জানান বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দর লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করে। অকটেন প্রতি লিটার ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ ও পেট্রল ৮৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে বিপিসির বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছিল। গত কয়েক মাসে লোকসান ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।

Advertisement
Share.

Leave A Reply