fbpx

দোলায় চড়ে কৈলাসে ফিরে গেলেন দেবী

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় ‘আনন্দময়ীর’ নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল, দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হলো।

সনাতন ধর্মমতে, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার সন্তান কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ চলে যান কৈলাসে স্বামীর ঘরে। সামনের বছর নতুন শরতে দেবী তাঁর পিত্রালয়ে আসবেন কৈলাস থেকে। মর্ত্যলোকে এবার দুর্গা এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে। আর ফিরে যাচ্ছেন দোলায় বা পালকি চড়ে।

শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় রাজধানীর বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে শাহজাহানপুর বাংলাদেশ রেলওয়ে পূজা কমিটির প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীকে বিদায় জানানোর ঘণ্টা বেজে ওঠে।

তবে ভক্তরা বিষাদ ভুলে হাসিমুখে দুর্গতিনাশিনীকে বিদায় জানাতে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে-অন্যকে সিঁদুরে রাঙান, নাচ-গান করেন, যেন সারা বছর এমন আনন্দে কাটে। সবার একটাই কামনা, সামনে বছর আবার হবে।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, মহিষাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে শুক্রবার বিজয়ী হয়েছেন দুর্গা মা। সে কারণেই আমাদের আনন্দের দিন, আমরা উৎসব করি। জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সবাইকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাই।

মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এ বছর যে শোভাযাত্রা হয়নি। এ বছর ঢাকা মহানগরে ২৩৮টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, যার যার মত করে এসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জন দেবে।‘

তিনি আরও বলেন, ‘নবরাত্রির ষষ্ঠ দিন সোমবার দুর্গ পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল এবার। তবে  অষ্টমীর দিন বুধবার সাম্প্রদায়িক উস্কানি আর কয়েকটি জেলায় মণ্ডপে-মন্দিরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় সার্বজনীন এ উৎসবের চেতনায় চোট লেগেছে।‘

মহা নবমী পেরিয়ে শুক্রবার সকালে বিজয়া দশমীর ‘বিহিত পূজায়’ ষোড়শপ্রচার পূজার পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়।‘

সবশেষে দর্পণ বিসর্জনের সময় প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে তাতে দেবীকে দেখে তার কাছ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় নেন ভক্তরা। মূলত এর মধ্য দিয়ে দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন সম্পন্ন হয়। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে আবার ভক্তের হৃদয়ে ‘মাকে’ নিয়ে আসাকে বিসর্জন বলে।

তবে করোনার কারণে এবারও বড় পরিসরে কোনো সিঁদুর খেলার আয়োজন রাখা হয়নি। প্রতিমা ঘাটে নিয়ে আসার পর শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন ভক্তকুল।

সবশেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে মা দুর্গা ও তার সন্তান কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনের সময় ‘দুর্গা মা কী, জয়’, ‘আসছে বছর আবার হবে’ বলে ধ্বনি দেওয়া হয়। ভক্তরা ঢাকের শব্দের সঙ্গে কাসার ঘণ্টা বাজিয়ে নৌকাযোগে প্রতিমাগুলো নদীতে বিসর্জন দেয়।

সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে রাজধানীর বেশির ভাগ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের কমিশনারের উপকমিশনার জসিম উদ্দীন মোল্লা বলেন, প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।

Advertisement
Share.

Leave A Reply