fbpx

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ নির্বাচন কমিশনের

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টিসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ ঠিক করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। অসুস্থতার কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উপস্থিত না থাকায় জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

তিনি জানান, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের একটাই উদ্দেশ্য, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা।

আহসান হাবিব খান বলেন, ‘আমরা অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন এবং আমরা অনেক আস্থাশীলতার ঘাটতির মধ্যে আছি। আমাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে প্রমাণ দিয়েছি, আমরা কিছুটা হলেও আগে থেকে আস্থা অর্জনে এগিয়ে গেছি।’

এ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেদের জবাবদিহিতা ও বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতাও বাড়বে বলে উল্লেখ করেন এ নির্বাচন কমিশনার।

কর্মপরিকল্পনায় সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ, সেগুলো মোকাবিলায় ইসির করণীয়, দলগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখা, নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও, কখন, কোন কাজ করবে, তার সম্ভাব্য সময়সূচিও নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি।

চ্যালেঞ্জ

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা সৃষ্টি; নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন; ব্যবহৃত ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি; অর্থ ও পেশীশক্তি নিয়ন্ত্রণ; নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা; সব রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ; নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, সমর্থক, পুলিশ বা প্রশাসন কর্তৃক কোনো রকম বাধার সম্মুখীন না হওয়া; জালভোট, ভোটকেন্দ্র দখল বা ব্যালট ছিনতাই রোধ।

একইসঙ্গে প্ৰাৰ্থী, এজেন্ট বা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে অবাধ আগমন; ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি; নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া; পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করা; পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করা এবং নিরপেক্ষ দেশি বা বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োজিত করা।

চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায়

বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী যে সুপারিশগুলো অধিকাংশজন করেছেন, তা বাস্তবায়ন; সব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রচারকার্য নির্বিঘ্নে করতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা; সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা; প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক দ্বারা প্রার্থী, সমর্থক ও তাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা। এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া; নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া; মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপি প্রধানের সঙ্গে সভা করে তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন, তারা যেন আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন, সে বিষয়ে অধীনস্থদের নির্দেশ দেওয়া।

একইসঙ্গে প্রত্যেক ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন; ভোট কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন; ইভিএমের ব্যবহার সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে সীমাবদ্ধ রাখা। শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোতে ব্যবহার করা; নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরদিন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ; নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ, ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে তদন্ত-পূর্বক সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া; আরপিও ও নির্বাচনী আচরণ বিধিতে কতিপয় প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা; রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার যতদূর সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া; রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণ নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পূর্বেই শুরু করা, যাতে যথাযথভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়।

এ ছাড়াও, যেসব প্রিসাইডিং বা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের বিষয়ে প্রার্থীর যুক্তিসঙ্গত আপত্তি থাকবে, তাদের নিয়োগ না দেওয়া; দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও তাদের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা; গণমাধ্যমকর্মী নিয়োগ ও তাদের জন্যও ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করা; নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এবং প্রার্থীদের জনসভা করার জন্য স্থান, তারিখ, সময় শিডিউল করে দেওয়া।

ইসির রোডম্যাপের সারসংক্ষেপ

১। আইন সংস্কার: ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

২। সংলাপ: ২০২২ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত।

৩। সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস: ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত।

৪। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত।

৫। নতুন দল নিবন্ধন: ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

৬। ভোটার তালিকা: ২০২২ সালের মে মাসে হালনাগাদ শুরু। ২০২৩ সালের মার্চে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সংসদীয় আসন অনুযায়ী ৩০০ এলাকার তালিকা প্রস্তুত।

৭। ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ: ২০২৩ সালের জুন থেকে আগস্ট। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ।

৮। প্রশিক্ষণ: ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে তফসিল ঘোষণার পরেও চলবে।

৯। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন: ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত।

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেক্ষেত্রে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply