fbpx

নাগরিক সমাবেশ, পরীর মুক্তি চাইলেন বক্তারা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বাংলাদেশে কোন অপরাধী নেই, একমাত্র অপরাধী পরীমনি! পরীমনির মতো এত বড় অন্যায় বাংলাদেশের আর কেউ করেনি, ব্যাপারটি এমন হয়েই দাঁড়িয়েছে। সারাদেশের মানুষ পরীমনির মুন্ডুপাত করছেন। এমনকি মিডিয়া অঙ্গনের কেউ কেউ পরীকে দোষারোপ করেই কথা বলছেন। এর ভেতর দিয়েও কিছু মানুষ চেষ্টা করছেন পরীমনির পাশে থাকতে। তার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে।

পরীমনির সাথে যা করা হচ্ছে তা যে অন্যায়, এটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির।

রবিবার (২২ আগস্ট) বিকেল ৪টায় শাহবাগে পরীমনির জন্য ন্যায় বিচারের দাবিতে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিকজন’ সংগঠনের আয়োজনে একটি সমাবেশ হয়। এই সমাবশের সাথে সংহতি জানিয়ে টেলিফোনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন এই বিশিষ্ট তিন ব্যক্তিত্ব। তারা জানান ইচ্ছা থাকলেও করোনার কারণে তারা সমাবেশে থাকতে পারেননি।

পরীমনির সাথে যা করা হয়েছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করেন সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, ‘পরীমনির মানবাধিকার ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আজকে রাষ্ট্রীয়ভাবে, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে, তাকে হেনস্তা করা হয়েছে। তাকে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি, এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। পরীমনি যদি সত্যিকারের অপরাধী হয়ে থাকে, তবে তার বিচার আদালতে হবে। তাকে হেনস্তা করার দায়িত্ব যেন রাষ্ট্র নিজ হাতে তুলে নিয়েছে। র‌্যাব  একটি বিশেষায়িত বাহিনী, তারা রাষ্ট্রের জরুরি প্রয়োজনে আসবে। পরীমনির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ রয়েছে, প্রতিরক্ষা বাহিনী রয়েছে। সেখানে র‌্যাবের মতো এলিট ফোর্স ব্যবহারের সুযোগ নেই।’

নাগরিক সমাবেশ, পরীর মুক্তি চাইলেন বক্তারাঅন্যদিকে এ বিষয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আদালতে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই পরীমনিকে যেভাবে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তা কোনো সভ্য সমাজের পরিচয় হতে পারে না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে যেভাবে হেনস্তা করা হয়, তার প্রতি বিদ্বেষমূলক ও হিংসাত্মক আচরণ করা হয়, তা থেকে সংযত হতে হবে। আমরা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে বলছি, নারীর প্রতি কোনো নির্যাতন, বৈষম্য আমরা বরদাশত করব না।’

পরীর ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন খুশি কবির। তিনি বলেন, ‘যে ধরনের নাটক তৈরি করা হয়েছে, যেভাবে আমাদের গিলানো হচ্ছে, তা যে কতটা বানোয়াট সেটা আমরা বুঝি। আমরা অতটা বোকা না। আজকে সেটা স্পষ্টভাবে চলে আসছে। পরীমনিকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেভাবে আদালতে আনা হয়েছে, তাতে আমাদের দেশের সম্মানহানি হয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত হুমকির সম্মুখীন রয়েছে। আজকে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের আদালতে ডাকা হয় না, খুনির আসামি রেহাই পায়। অথচ পরীমনিকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে, তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।’

নাগরিক সমাবেশের আয়োজক রবিন আহসান বলেন, ‘যেভাবে পরীমনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাতে আমাদের মনে হয়েছে পরীমনি নয় আমাদের নারীদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যেই এসব করা হচ্ছে। সেই সাথে আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যই এসব করা হচ্ছে। পরীমনির পাশে দাঁড়ানোর কারণে আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে। এর আগেও অনেক আন্দোলন করেছি, কিন্তু এমন হয়রানির শিকার হইনি।’

নাগরিক সমাবেশ, পরীর মুক্তি চাইলেন বক্তারাসমাবেশের সাথে সংহতি জানিয়ে মুঠোফোনে সংযুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম নারী ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

তিনি বলেন, পরীমনি প্রথমত একজন ব্যক্তি। সে নাগরিক বাংলাদেশের। যে মামলাগুলি তাকে দেওয়া হয়েছে, তাকে যেভাবে বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন আইনি প্রক্রিয়ায় এসব জামিনযোগ্য। তাকে জামিন দেওয়া যায়। কিন্তু আমরা দেখছি তাকে তিন তিন বার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তার (পরীমনি) সম্পর্কে যে কটুক্তি, অশ্রাব্য ভাষা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে সেটা কোনো ভাবে আমাদের জন্য কাম্য নয়।

তিনি আরো বলেন, দেশে সমগ্র জনসংখ্যার পঞ্চাশ ভাগ নারী। আর এই নারী দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পরীমনি চলচ্চিত্র জগতের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। তার প্রতি যে আচরণ করা হচ্ছে। দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে আসার যৌক্তিক কোনো কারণ এখনও আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়নি।

নাগরিক সমাবেশ, পরীর মুক্তি চাইলেন বক্তারাবাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুমের সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আকরাম খান, রাশিদ পলাশ, ইউসুফ চৌধুরী, সোহেল রানা বয়াতি, মোস্তফা মনন, লেখক ও সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী, রঞ্জু চৌধুরী, সঙ্গীতশিল্পী শতাব্দী ভব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানাসহ আরও অনেকে।

এর আগে পরীমনির ঘটনার ইস্যুতে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ১৭ নাগরিক। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্যাডে লেখা ওই বিবৃতিতে চলচ্চিত্র জগতের এক অভিনেত্রীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নব্য-ধনিক সমাজের যে চেহারা ফুটে উঠেছে তা আমাদের গভীরভাবে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে বলে জানিয়েছিলেন তারা।

নাগরিক সমাবেশ, পরীর মুক্তি চাইলেন বক্তারাবিবৃতিদাতা ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক হচ্ছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ হাসান ইমাম, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, সেলিনা হোসেন, আবেদ খান, ফেরদৌসী মজুমদার, সারোয়ার আলী, মফিদুল হক, মামুনুর রশীদ, আবদুস সেলিম, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, শাহরিয়ার কবীর, মুনতাসীর মামুন, গোলাম কুদ্দুছ, হাসান আরিফ।

Advertisement
Share.

Leave A Reply