শ্রেফ পণ্যের মডেল। পুঁজিবাদে এই তো নারীর পরিচয়। তাবৎ লাইফস্টাইল আর ফ্যাশন ভূষণে নারীর হাজিরা এভাবেই। অথচ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল বিবেচ্য এটি ছিল না। সেটি এ দিনের ইতিহাস ঘাটলেই প্রমাণ মেলে।
১৫ হাজার নারী সেই ১৯০৮ সালের এই দিনে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তাদের দাবি ছিল, কাজের সময়সীমা সহনীয় মাত্রায় থাকুক। মজুরি বাড়ুক সামান্য। তাদের ভোটের অধিকার দেয়া হোক। রুশ বিপ্লবের আগে রাশিয়ার মেয়েরা যে চারদিন ধরে ধর্মঘট করেছিল, তাদের দাবিও ছিল সামান্য—‘রুটি আর শান্তি’।
সে পরিস্থিতি শতবর্ষ পার হয়ে এ জনপদে কতটুকু বদলেছে?
‘আমি মেয়ে এবং মেয়ে হয়ে বাঁচতেই ভালোবাসি। শত প্রতিকূলতার ভেতরও কখনো মনে হয়নি, ইস! আমি যদি ছেলে হতাম! তবে হ্যাঁ, বাঁচতে চেয়েছি মানুষ হিসেবেই।‘- কথাটা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী।
কিন্তু, প্রশ্ন অন্য জায়গায়। একজন নারী কী জামা পরবে, কী শাড়ি পরবে মোট কথা নিজের সাজগোজের চিন্তায় অনেকটা সময় কাটিয়ে দেয়। আছে আরো নানা অনুষঙ্গ। তাকে কেমন লাগছে বা লাগবে দেখতে, দেখতে অন্যের চেয়ে সুন্দর লাগতে হবে, এসব নিয়ে ভাবতেই বেশি ভালোবাসেন অনেক নারী।
আবার, অনেক নারী বাঁচতে চায় পুরুষের মতো করে। পুরুষের মতো করে কেন বাঁচতে হবে? আপনি নারী, তাই নারীর মতই বাঁচুন, জীবনকে উপভোগ করুন। মানুষ হিসেবে বাঁচার জন্য তো নারী-পুরুষ আলাদা কোনো অর্থ তৈরি করে না। নারী-পুরুষ সৃষ্টিগতভাবেই আলাদা বৈশিষ্টের। যার যার মত করে বাঁচার অধিকার আছে প্রত্যেকেরই। এখানে জেন্ডারকরণের কোনো জায়গা নেই। জেন্ডারকরণ করে নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার এক কুরাজনীতি। আর এটা প্রকৃতির বৈশিষ্ট যে, সবল দুর্বলের উপর অত্যাচার বা শোষণ করে। তাই মেয়েদের জায়গা তৈরি করে নেওয়ার দায়িত্ব মেয়েদেরই।
শুধু পড়াশোনা করলেই হবে না, কাজে, মননে আপনি মানুষ হয়ে উঠুন। অনেকেই পড়াশুনা করেও নিজেকে শুধু একজন মেয়েই ভাবতে ভালোবাসেন বা ছকে বেধে দেওয়া জীবনেই বাঁচতে ভালোবাসেন।
এখন সময় এসেছে বদলানোর। নারী, আপনি আপনার বোধ, বুদ্ধি, মগজে শান দিন এবং বিবেচনাবোধ দিয়ে জীবনকে বদলান। অন্তত চেষ্টা তো করুন। নিজের যোগ্যতা এবং অধিকার নিয়ে আনন্দে বাঁচুন।