fbpx

নিউইয়র্কে সালমান রুশদীর ওপর হামলা, হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

লেখক সালমান রুশদীর মুখপাত্র (এজেন্ট) বলেছেন, নিউইয়র্কে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হওয়ার পর লেখকের ‘খবর ভালো নয়’। তার গলা ও পাকস্থলীতে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এবং তিনি একটি চোখ হারাতে পারেন। বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

রুশদীর মুখপাত্র অ্যান্ড্রু ওয়াইলি এক বিবৃতিতে বলেন, রুশদীকে মঞ্চেই আক্রমণ করা হয়েছে এবং এখন তিনি হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে রয়েছেন ও কথা বলতে পারছেন না।

১৯৮৮ সালে স্যাটানিক ভার্সেস বইটি প্রকাশের পর থেকে রুশদী ইসলামপন্থীদের হত্যার হুমকির মধ্যে ছিলেন।

তার ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ নিউজার্সি থেকে ২৪ বছর বয়সী হাদি মাতার নামে এক সন্দেহভাজনকে আটক করেছে।

নিউইয়র্কের পুলিশ বলছে, শিটোকোয়া ইন্সটিটিউশনে সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি দৌড়ে মঞ্চে গিয়ে রুশদী এবং তার সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর ওপর আক্রমণ করে।

অ্যান্ড্রু ওয়াইলি বলেন, “৭৫ বছর বয়সী সালমান সম্ভবত একটি চোখ হারাতে পারেন। তার বাহুর নার্ভ এবং লিভার ছুরির আঘাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে”।

পুলিশ এখনো এই হামলার কারন সম্পর্কে কোন ধারনা দিতে পারেনি। তারা অনুষ্ঠানস্থলে পাওয়া ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও একটি ব্যাগ পরীক্ষা করে দেখছে।

রুশদীকে গলায় ও পাকস্থলী বরাবর ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। হামলার পরপরই তাকে হেলিকপ্টারে করে পেনসিলভানিয়ার একটি হাসপাতালে নেয়া হয়।

অন্যদিকে মঞ্চে যিনি রুশদীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন সেই হেনরি রিসেকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তিনি মাথায় অল্প আঘাত পেয়েছেন।

হত্যার হুমকি পাওয়া নির্বাসিত লেখকদের জন্য কাজ করা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

পুলিশ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, সেখানকার কর্মকর্তা ও দর্শক শ্রোতারা দ্রুত দৌড়ে গিয়ে হামলাকারীকে ধরে ফেলেন ও পরে তাকে আটক করা হয়।

ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী লিন্ডা আব্রামস নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বাধা দেয়ার পরেও হামলাকারী রুশদীকে আঘাত করার চেষ্টা করছিলেন।

“তিনি আঘাত করেই যাচ্ছিলেন। তাকে সরাতে পাঁচ জন লেগেছে। তিনি ছিলেন ক্ষিপ্ত। খুবই শক্তিশালী ও দ্রুতগামী,” বলছিলেন তিনি।

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী রিটা ল্যান্ডম্যান বলেছেন হামলার পরপর দেখে মনে হচ্ছিলো যে রুশদী বেঁচে আছেন।

“লোকজন চিৎকার করে বলছিল, এখনো তার পালস পাওয়া যাচ্ছে, পালস পাওয়া যাচ্ছে।”

অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এসময় কিছু দর্শক দ্রুত মঞ্চের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। সেখানে উপস্থিত লোকজন হামলাকারীকে থামাচ্ছেন।

পুলিশ বলছে দর্শকদের মধ্যে থাকা একজন চিকিৎসক আহত লেখককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন।

ভারতে জন্ম নেয়া ঔপন্যাসিক সালমান রুশদী ১৯৮১ সালে তার মিডনাইট’স চিলড্রেন বই দিয়ে খ্যাতি পান। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটি দশ লাখ কপির বেশি বিক্রি হয়েছিলো।

তবে তার চতুর্থ বইয়ের জন্য তাকে প্রায় দশ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। এটি হলো ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হওয়া স্যাটানিক ভার্সেস।

বইটি বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। তারা মনে করেন এ বইয়ে ইসলাম অবমাননা করা হয়েছে। বইটি পরে অনেক দেশে নিষিদ্ধ করা হয়।

বইটির অনুবাদকারী একজন জাপানির ওপরেও ১৯৯১ সালে হামলা হয়েছিলো। এর কয়েক মাস করে একজন ইতালিয় অনুবাদকারীও হামলার শিকার হয়েছেন। গুলি করা হয়েছিলো বইটির নরওয়েজিয়ান প্রকাশককেও। যদিও তারা বেঁচে গিয়েছিলেন।

এছাড়া রুশদী বিরোধী দাঙ্গায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। তেহরানে ব্রিটিশ দূতাবাসেও হামলা হয়েছিলো।

বইটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি, রুশদীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন এবং এ জন্য ত্রিশ লাখ ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করে একটি ফতোয়া দেন।

রুশদীর মাথার মূল্য ঘোষণা করে দেয়া এই ফতোয়া এখনো বহাল আছে। যদিও ইরান সরকার খোমেনির এই ফতোয়া থেকে দূরত্বই বজায় রাখছিলো। তবে ইরানের ধর্মীয় ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা ২০১২ সালে পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫ লাখ ডলার বাড়িয়ে দেন।

সালমান রুশদী একজন ব্রিটিশ-আমেরিকান নাগরিক। মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেও পরে তিনি কোন ধর্ম বিশ্বাসী ছিলেন না।

তিনি নিজেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে শক্ত কণ্ঠ হিসেবে তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন সময়ে তার কাজের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।

২০০৭ সালে ব্রিটেনে তাকে যখন নাইটহুড দেয়া হয় তা নিয়েও ইরান ও পাকিস্তানে প্রবল প্রতিবাদ হয়। একজন মন্ত্রী বলেছিলেন যে ‘এই সম্মান আত্মঘাতী হামলাকে বৈধতা দেয়’।

রুশদীর অনেক সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান হুমকি ও বয়কটের শিকার হয়েছে। কিন্তু তিনি লেখা অব্যাহত রেখেছেন। তার পরবর্তী বই ভিক্টরি সিটি ২০২৩ সালে প্রকাশিত হওয়ার কথা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply