fbpx

নিজেকে হিরো প্রমাণ করতেই শিক্ষক উৎপলকে পেটায় জিতু: র‍্যাব

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে গত ২৫ জুন স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু। এক ছাত্রীর কাছে নিজেকে হিরো প্রমাণ করতেই সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

জিতুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন উৎপল কুমার সরকার। সেই হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম, চুলকাটা, ধূমপান, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত বিষয়গুলো দেখভাল করতেন।’

কমান্ডার আল মঈন জানান, স্কুলের এক ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন জিতু। এই ঘোরাফেরা থেকে জিতুকে বিরত থাকতে বলেন উৎপল। এই ঘটনায় জিতু ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম প্রদর্শন করতে শিক্ষক উৎপলের উপর হামলার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী গত ২৫ জুন স্কুলে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে আহত করে জিতু। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষক উৎপল মারা যান।’

ওই ঘটনার পরেই পালিয়ে যায় জিতু ও তার পরিবার। গতকাল (২৯ জুন) র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে আশরাফুল আহসান জিতু ওরফে জিতু দাদাকে গ্রেফতার করে এলিট ফোর্স র‍্যাব।

র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জিতু জানায়, শিক্ষক উৎপলকে সে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় এবং পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে।

এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন শিক্ষক উৎপল মারা যান।

র‍্যাব বলছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জিতু এলাকায় অবস্থান করলেও পরে এলাকা ত্যাগ করে। প্রথমে বাসে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাতে থাকে। পরদিন সে তার অবস্থান পরিবর্তন করে আরিচা ফেরিঘাটে পৌঁছায় এবং টলারে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার এক পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরদিন ভোরে সে আবারও তার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য আতাইকুলা থেকে বাসে কাজিরহাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে লঞ্চে আরিচাঘাট পৌঁছায়। সেখান থেকে বাসে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে যায়। সেখান থেকেই জিতুকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

কমান্ডার মঈন আরও জানান, ‘জিতু স্কুলে নিয়মিত ছাত্র নয়। সে শিক্ষাজীবনে বিরতি দিয়ে প্রথমে স্কুল, পরে মাদ্রাসা ও সর্বশেষ পুনরায় স্কুলে ভর্তি হয়। জিতু ওই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। সে স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং ও বিরক্ত করতো জিতু। স্কুল প্রাঙ্গণে সবার সামনে ধূমপান, স্কুল ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়া চলাফেরা করতো সে।’

জিতু তার নেতৃত্বে এলাকায় ‘জিতু দাদা’ নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে যত্রতত্র আধিপত্য বিস্তার করতো সে। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার অনুসারি গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হতো।

জিতুর জেএসসির সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার বয়স ১৯ বছর। কিন্তু মামলার এজাহারে তার বয়স ১৬ বছর উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

Advertisement
Share.

Leave A Reply