fbpx

পঞ্চাশে ‘ওরা ১১ জন’

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

১৯৭২ সালের ১১ আগস্ট, স্বাধীনতার ১ বছর পর ঠিক আজকের এই দিনেই মুক্তি পেয়েছিলো মুক্তিযদ্ধের প্রথম সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’। সিনেমাটি পার করলো মুক্তির ৫০ বছর।

যুদ্ধের সিনেমা বলতেই সাধারণত আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই’, ‘ওয়াটারলু’, ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’, ‘দ্য পিয়ানিস্ট’সহ বাইরের দেশের নানা সিনেমার কথা। কোনো সিনেমার বিষয় যুদ্ধের ভয়াবহতা আবার কোনোটিতে রয়েছে মানবিক বিপর্যয়ের গল্প। তবে সদ্য স্বাধীন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে নির্মিত ‘ওরা ১১ জন’ নানা বিষয়ে পৃথিবীর অনেক সিনেমা থেকেই আলাদা। একই সঙ্গে কঠিন সংগ্রাম আর আবেগে টইটম্বুর আখ্যান।

এই সিনেমায় পেশাদার অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন রণাঙ্গনের যোদ্ধারা এই উদাহরণও কিন্তু বিরল। সিনেমার নাম ওঠার সময় ব্যবহার করা হয়েছে ছয়বার কামান দাগার শব্দ। প্রতীকীভাবে আমাদের স্বাধীনতার পটভূমি তৈরিতে ঐতিহাসিক ছয় দফার ভূমিকার কথাই মনে করিয়ে দেয় এটি।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়, জানা যায় যুদ্ধের দৃশ্যে ব্যবহার করা হয়েছিলো সত্যিকারের গোলাবারুদ। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এমনটাও শোনা যায়, রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দৃশ্যে শুটিংয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  ইকবাল হল থেকে ধরে আনা হয়েছিলো সত্যিকারের রাজাকারদের। তবে সরাসরি নয়, পানিতে গুলি করে তাদেরকে বলা হয়েছিলো গুলি খাওয়ার অভিনয় করতে। শুটিং করা হয়েছিলো সেভাবেই। মুক্তিযুদ্ধে অনেক নারী হন নির্যাতিত, নিগৃহীত, সেটিও এই সিনেমায় উঠিয়ে আনা হয়েছে।

সিনেমাটি শুরু হয় ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ গানটির মধ্য দিয়ে। ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময়ে রচিত এ গানটি সিনেমার সূচনা সংগীত হিসেবে দেশভাগ পরবর্তী বাংলা অঞ্চলের এক সমন্বিত সুর হিসেবেই আমাদের কানে এসে বাজে। অন্যদিকে সিনেমা শেষ হয় ‘এক সাগরের রক্তের বিনিময়ে’ গানটি দিয়ে।

এই সিনেমা হয়তো সফল সিনেমার তকমা পাবে না, মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ আখ্যানও নয়। কিন্তু ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে যাওয়া, পাকিস্তানিদের বর্বরতা, দেশীয় দালালদের চামচামিকে ঠিকই উঠিয়ে এনেছে যা হয়তো এই সিনেমার মূল সফলতা।

মূলত দেশ কিভাবে স্বাধীন হলো তার প্রমাণ রাখার চিন্তা থেকেই ‘ওরা ১১ জন’ সিনেমার নির্মাণ ভাবনা মাথায় আসে। পরিচালক হিসেবে বেছে নেওয়া হলো নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামকে। সিনেমার অন্যতম প্রযোজক হিসেবে ছিলেন সোহেল রানা, যিনি নিজেও ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

জয়দেবপুর আর এফডিসিতে শুটিং করা হয় ঐতিহাসিক এই সিনেমার। অভিনয় করেন রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, খলিল, হাসান ইমাম, মিতা, রওশন জামিল, সুমিতা দেবী, মিনারা জামান, এ টি এম শামসুজ্জামানের মতো অভিনয়শিল্পীদের। মুক্তিযোদ্ধা ১১ জন ছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল, বেবি, নান্টু, ওলীন, মঞ্জু, আতা, ফিরোজ, আবু, আলতাফ।

Advertisement
Share.

Leave A Reply