পদ্মা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে আর কষ্ট করতে হবে না। নদী পার হতে গিয়ে কারও সন্তান হারাতে হবে না। বাবা, মাকে হারাতে হবে না। ভাই, বোনকে হারাতে হবে না, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে সেতুর ফলক উন্মোচন শেষে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে আপনারা নির্দ্বিধায় চলতে পারবেন। আর যারা বাধা দিয়েছে, তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে জবাব দিয়েছি যে, বাংলাদেশ পারে।’
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি বিশেষ দিন। কিছু সময় আগে আপনাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে আসলাম, যা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করবে। বিশেষ করে ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়েছেন, নির্বাচিত হয়েছি। তারপর বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণে কাজ করছি।’
পদ্মার ওপর সেতু হয়েছে কি-না, তা দেখে যেতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। খালেদা জিয়া এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে আবার কাজ শুরু করেছিলাম। তখন তারা কী বলেছিল? বলেছিল আওয়ামী লীগ কখনও পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না। খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করি, আসুন; দেখে যান পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি-না।’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী লোক বলেছিল নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়। আজ নিজেদের টাকায় কীভাবে পদ্মা সেতু করতে পারলাম? আপনারা, এই বাংলাদেশের জনগণ, আপনারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের শক্তিই বড় শক্তি। এটা আমি বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছি।’
এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় ৪ নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন। জাতির পিতা এ দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন।
সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, পরামর্শক, ঠিকাদার, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, শ্রমিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ধন্যবাদ জানাই পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের অধিবাসীদের যাদের জমিজমা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের এই ত্যাগ ও সহযোগিতা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে শনিবার সকালে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, মাওয়া প্রান্তে ১১ টা ৫৮ মিনিটে পদ্মা সেতুর এক প্রান্তের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে গাড়িবহরে করে সেতু পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে যান । সেখানেও আরেকটি ফলক উন্মোচন করেন।
দ্বিতীয় ফলক উন্মোচন শেষে মাদারীপুরে গিয়ে জনসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।