fbpx

পদ্মা সেতু: খুলে দেবে অর্থনীতির স্বর্ণদুয়ার 

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১ টা ৫৮ মিনিটে স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী সভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সেতুর ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত পাইল বসানো হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এ সেতু অবদান রাখবে।

রেলপথ চালু হলে ২১টি জেলা সুফল পাবে। পদ্মাপাড়ের মানুষ আর অবহেলিত থাকবে না বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে জিডিপি প্রত্যাশিত ১.২৩ শতাংশের চেয়ে বেশি হবে। এ বছরের শেষে বঙ্গবন্ধু টানেল শেষ হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আমাদের অর্থনীতি গতিশীল হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে, এর সত্যতার প্রমাণ সহজেই পাওয়া যায়। কেননা পদ্মা নদী ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। এই অঞ্চলের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই দূরুহ। পণ্য পরিবহণ, গ্যাস, কল-কারখানা, বড় বড় শিল্প ইন্ডাস্ট্রি ছিল কেবল স্বপ্ন।

শুধু তাই নয়, দারিদ্র্য ছিল এই অঞ্চলের মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। দেশের মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ মানুষ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করলেও দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল এই অঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যমুনার চেয়ে পদ্মা সেতুর অবদান বেশি হবে। পদ্মা সেতুর পথ ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা, আরএমজি, অ্যাসেম্বলিং প্লান্ট, স্টোরেজ সুবিধাসহ অনেক ছোট-বড় শিল্প গড়ে উঠবে।

এডিবির হিসাব অনুযায়ী, এই সেতুকে ঘিরে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আঞ্চলিক অর্থনীতিকে চাঙা করবে। জাইকার হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ভ্রমণের সময় ১০ শতাংশ হ্রাস বিভিন্ন জেলার অর্থনীতিকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করবে, যা এই অঞ্চলের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করবে।

পদ্মা সেতুর নির্মাণে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। ফলে কম খরচ ও সময়ে এই অঞ্চলের উৎপাদিত সেবা ও পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।

হিমায়িত মৎস্য ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। আর এসব পণ্য বেশি উৎপাদিত হয় দক্ষিণের খুলনা অঞ্চলে। সেতু চালু হলে সবকিছু আরও বেশি গতিশীল হবে। শুধু তাই নয়, অর্থনীতিতে মোংলা ইপিজেড আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এই এলাকায় নতুন গার্মেন্টস, বিভিন্ন মিল, ফ্যাক্টরি, শিল্পকারখানা তৈরি হবে। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল করতে এই সেতু বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

চলুন জেনে নেই, পদ্মা সেতু যেভাবে দক্ষিণের মানুষের ভাগ্য বদলে ভূমিকা রাখবে:

যোগাযোগ ব্যবস্থা :

বাংলাদেশের ৮০ শতাংশের বেশি পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ফলে এই পথে সারা বছর যানজট লেগেই থাকে। ফলে মূল্যবান সময় ও অর্থের অপচয় হয়। অন্যদিকে দক্ষিণের সঙ্গে রাজধানীর যোগযোগ হয় লঞ্চ ও ফেরির মাধ্যমে।

কিন্ত মাঝে মাঝেই বাধ সাধে কুয়াশা ও তীব্র স্রোত। ঘন কুয়াশা ও স্রোত থাকার কারণে এই রুটে লঞ্চ-ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। সেতু চালু হওয়ায় এসব ভোগান্তি থেকে রেহাই পাচ্ছে দক্ষিণের এই অঞ্চল।

অন্যদিকে বেনাপোলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগে সময় ও অর্থের অপচয় বহুগুণে কমবে। আর তিন সমুদ্রবন্দরের মধ্যে মোংলা ও পায়রা বন্দর দিয়ে অনেক পণ্যের আমদানি-রপ্তানি সহজ হবে। ফলে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে চাপ কমবে, অন্যদিকে অর্থ ও সময়ের অপচয় কমবে।

কৃষি:

বাংলাদেশের শস্যভান্ডার খ্যাত বরিশাল অঞ্চলের ভাগ্যের দ্বার খুলে দেবে পদ্মা সেতু। দেশের বেশিরভাগ সবজি ও খাদ্যশস্য এই অঞ্চলে উৎপাদিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় অনেক সময় বিভিন্ন শস্য দূরের অঞ্চলে পাঠানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়েন। আবার অনেক সময় সঠিক দাম না পেয়ে কৃষকরা অনেক ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য উৎপাদন কমিয়ে দেন। তাই এই সেতু এই অঞ্চলের দুঃখ লাঘব করবে।

পর্যটন:

বরিশাল বিভাগকে বলা হয় বাংলার ভেনিস। বর্ষা মৌসুমে এর সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, এই বিভাগে অবস্থিত দ্বিতীয় সমুদ্র সৈকত সাগরকন্যা কুয়াকাটা। যা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ। দক্ষিণে আরও আছে সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, মনপুরাসহ বিভিন্ন দ্বীপ। যার সৌন্দর্য দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে।

কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় দ্বিতীয়বার এই অঞ্চলে আসতে চায় না পর্যটকেরা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে পর্যটকদের জন্য নতুন ও বিলাসবহুল হোটেল ও কর্মসংস্থান তৈরি হবে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক খুব সহজেই এ অঞ্চলে ভ্রমণ করতে পারবেন। এতে পর্যটন খাতের বিকাশ হবে এবং সেই সঙ্গে আঞ্চলিক পণ্যের চাহিদাও বাড়বে। ফলে বিভিন্নভাবে এই অঞ্চলের মানুষ লাভবান হবে।

জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন:

দেশের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের মধ্যে বরিশাল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে না পেরে এই অঞ্চলের অনেক মানুষ রাজধানীতে পাড়ি জমায়, যাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করে নিম্নমানের জীবনযাপন করে। সেতু চালু হলে দুই পাশে সিঙ্গাপুর ও চীনের সাংহাই শহরের আদলে নতুন দুটি শহর তৈরির চিন্তা আছে বর্তমান সরকারের। এরই মধ্যে বিভিন্ন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানার জন্য জমি কিনতে শুরু করেছে। সেতুর দুই পাশে বিভিন্ন শিল্প এলাকা ও নতুনভাবে গার্মেন্টস খাতের সম্প্রসারণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এ এলাকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply