fbpx

পাখিসব করে রব জাহাঙ্গীরনগরে…

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

চারিদিকে সবুজের সমারোহ আর গাছ গাছালিতে ঢাকা। সবুজের এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের মাঝে হুট করেই ডেকে ওঠে একপাল শেয়াল। ডেকে ওঠে হুক্কা হুয়া তার তালে তাল মেলায় রাতজাগা পাখি। তারা কিচির মিচির শব্দে নিজেদের উপস্থিতির প্রমাণ দেয়। আর মাতিয়ে তোলে চারপাশের পরিবেশ।

এরই মাঝে আবার একদল আঁকা-বাঁকা জলাশয়ে লাল সাদা শাপলা ফুলের মাঝে মেতে ওঠে জলকেলিতে। আর ডালে ডালে শিকারের আশায় বসে থাকে মাছরাঙ্গার তীক্ষ্ণ চোখ।

এই নয়নাভিরাম দৃশ্য কেবল দেখতে পাওয়া যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাংস্কৃতিক রাজধানী-খ্যাত দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃতি যেনো আপন সাজে সেজে ওঠে ।

পাখিসব করে রব জাহাঙ্গীরনগরে…

প্রতিটি ঋতুতে এর সৌন্দর্য একেক রকম। আর শীতকালে যেনো তা অন্য আরেক রূপে সেজে ওঠে। যান্ত্রিক নগরীতে শীতের আমেজ টের না পাওয়া গেলেও জাবিতে ভোরের কুয়াশা, শিশির ভেজা ঘাস, রাতের হিমেল হাওয়া, শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধ, আর হাজার মাইল দূরের সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখি উৎসবের ভিন্ন বার্তা বয়ে আনে।

এখানে শিক্ষার্থীদের ঘুম ভাঙ্গে পাখির কলতানে। তাদের কিচির মিচির শব্দ জানান দেয়, আড়মোড়া ভেঙ্গে ওঠার সময় হয়ে গেছে। আবার গোধূলির শেষে সূর্য যখন ডুবু ডুবু তখনই মাথার উপর দিয়ে দল বেধে উড়ে একঝাঁক অতিথি পাখি।

শীতের বার্তা দিতে প্রতিবছর সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া বা হিমালয়ের উত্তরাঞ্চল থেকে এই পরাযায়ি পাখিরা সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে আসে বাংলাদেশে।

পাখিসব করে রব জাহাঙ্গীরনগরে…

প্রতিবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের শুরুতে এই পরাযায়িরা জাবি ক্যাম্পাসে চলে আছে। তবে এবার যেনো তারা একটু আগেই চলে এসেছে। কে জানে কিসের তাড়া তাদের! আর তাদের কোলাহলে মুখরিত করেছে এখানকার পরিবেশ। ৭০০ একরের এই জায়গায় তারা যেনো নিজেদের আপন সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। লাল শাপলার ফাঁকে জলকেলি, ওড়াওড়ি ও খুঁনসুটিতে তারা নিজেদের ব্যস্ত সময় পার করেছে।

পরীযায়ি এই পাখিদের নামও বিচিত্র। সরালি, গার্গেনি, পিচার্ড, মানিকজোড়, মুরগ্যাধি, জলপিপি, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতা টুপি, লাল গুরগুটিসহ নাম না জানা আরও কত কি!

প্রতিবছর পাখি আর মানুষের কোলাহলে ক্যাম্পাস মুখরিত থাকে। তবে চলতি বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ। ফলে আগের তুলনায় এবার দর্শনার্থীদের সংখ্যা একটু কম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে এখানে প্রথম অতিথি পাখি আসা শুরু করে। এসব পাখির মধ্যে ১২৬টি দেশীয় ও ৬৯টি বিদেশি প্রজাতি মিলিয়ে মোট ১৯৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। অতিথি পাখিরা অক্টোবরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জলাশয়ের আশপাশে আশ্রয় নিতে শুরু করে। আর ডিসেম্বরের দিকে তা পরিপূর্ণ রূপ পায়।

পাখিসব করে রব জাহাঙ্গীরনগরে…

সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয়, পরিবহন অফিস ও প্রকৌশল অফিস সংলগ্ন জলাশয়, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের ভেতরের জলাশয় এবং সুইমিংপুল এলাকার জলাশয়ে অতিথি পাখির উপস্থিতি দেখা যায়। এই জলাশয়গুলো অতিথি পাখির জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়।

জাবির পাখি বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে পাখি শুমারিতে ক্যাম্পাসে ৫ হাজারের কিছু বেশি পাখি এসেছিল বলে রেকর্ড করা হয়। তবে এবার শুরুতেই ৫ হাজারের মতো পাখি এসেছে।

তিনি আরও বলেন, এবছর পাখির সংখ্যা ও প্রজাতির সংখ্যাও বেড়েছে। যেসব প্রজাতি এবার এসেছে এদের মধ্যে আছে- নাকতা হাঁস, খুনতে হাঁস, জিরিয়া হাঁস, ভুতি হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, আফ্রিকান কম্বডাক, ছোট সরালি ও বড় সরালি। এর মধ্যে ছোট সরালি দেশের হাওর অঞ্চল থেকে আসে। আর বড় সরালি জাতের পাখিরা সাইবেরিয়া, নেপাল, চীন, ভারতের আসাম, অরুণাচল অঞ্চল থেকে আসে।

ডিসেম্বর শেষে আরও বেশি পাখি আসবে বলেও তিনি মনে করেন।

Advertisement
Share.

Leave A Reply