fbpx

পান্তা ভাতে আছে জাদু!

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া প্রতিযোগীতার ফাইনালে পান্তাভাত তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। যে খাবার আমাদের বাঙালিদের এক রকম অভাবের চাহিদা পূরণ করে সেই আটপৌরে খাবার কোন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পরিবেশন করা যায় এটা কেউ আগে ভাবতেই পারেনি। স্বাভাবিকভাবেই পান্তা ভাতের কদর বেড়ে গেছে। এমনকি পান্তা ভাত নিয়ে শুরু হয়ে গেছে গবেষণা। ভারতের কৃষি জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড। মধুমিতার নেতৃত্বে একটি গবেষা পরিচালিত হয়েছে। সেখান থেকেই উঠে এসেছে পান্তা ভাতের উপকারীতা, অপকারীতাসমূহ। আজ বিবিএস বাংলার পাঠকদের জন্য থাকছে পান্তা ভাতের আদ্যপান্ত।

পান্তা ভাতে যা আছে
গবেষণায় দেখা গেছে পান্তা ভাতে নানা ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন বি ইত্যাদি।

মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, পান্তা ভাতে সাধারণ ভাতের তুলনায় এসব পুষ্টিদায়ক পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।

এমনকি তিনি একটি উদাহরণও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে তৈরি পান্তা ভাতে এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম। একইভাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়। ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে যেখানে ক্যালসিয়াম থাকে ২১ মিলিগ্রাম, সেখানে পান্তা ভাতে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৫০ মিলিগ্রাম।

গবেষণা বলছে, পান্তা ভাতে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংকের উপস্থিতিও অনেক বেড়ে যায়।

উপকারীতা
পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে বলে রায় দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে আয়রন যেটা পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। শরীরে হাড়গুলোকে শক্ত রাখে ক্যালসিয়াম। শরীরে নিঃসৃত এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম।

এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের  মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। এসব কোলেস্টোরেল কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়াও পান্তা ভাতে রয়েছে আইসোরহ্যামনেটিন-সেভেন-গ্লুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এ বিষয়ে মধুমিতা বড়ুয়া আরও জানান, গবেষণায় তারা দেখেছেন যে পান্তা ভাতে ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণত দই-এর মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।

এছাড়াও গরমের সময় পান্তা ভাত শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে।

অপকারীতা     
গবেষণায় পান্তা ভাতের কোনো খারাপ দিক পাওয়া যায় নি। তবে গবেষকেরা বলছেন, ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাতের ফারমেন্টেশন হলে সেখানে অ্যালকোহলের উপাদান তৈরি হয় এবং সেই পান্তা ভাত খাওয়ার পর শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে ও ঘুম পেতে পারে।

এছাড়াও পান্তা ভাত যদি পরিস্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি করা না হয়, তাহলে সেখানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, উড়িষ্যা, দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা- এসব অঞ্চলেও জনপ্রিয় খাবার এই পান্তা ভাত। তবে একেক জায়গায় পান্তা ভাতকে একেক নামে ডাকা হয়।

বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীন, ইন্দোনেশিয়াতেও ফার্মেন্টেড রাইস খাওয়া হয় তবে তৈরি করার প্রক্রিয়া ও স্বাদ পান্তা ভাতের চেয়ে আলাদা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply