৩০ আগস্ট পর্যন্ত ২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৭০০ ডোজ টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, প্রতি মাসে যাতে এক কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ তথ্য জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার বিষয়টি সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। করোনার টিকা সংগ্রহে বিশ্বের সব টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গেই সরকার যোগাযোগ করেছে। প্রথমদিকে কেবল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সাড়া পাওয়া যায়।পরবর্তীকালে চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি থেকে সাড়া পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য সমঝোতা চুক্তিও হয়েছে বলেও জানান সংসদ নেতা।
শেখ হাসিনা বলেন, মহামারি করোনা প্রতিরোধ করার জন্য এ পর্যন্ত (৩০ আগস্ট) ১ কোটি ৮২ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ১৬৯ জনকে দ্বিতীয় ডোজসহ ২ কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ১৮৭ ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। মজুত রয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৩ ডোজ। টিকা সংগ্রহ এবং বিনামূল্যে প্রদান কাজ চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কোন জায়গা থেকে থেকে কি পরিমাণ টিকা পেয়েছেন, সে প্রসঙ্গে বলেন- ‘এই এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উপহার হিসেবে ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা (কোভিশিল্ড) ৩২ লাখ ডোজ এবং চীনের সিনোফার্ম টিকার ২১ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে উপহার হিসেবে মডার্নার টিকার ৫৫ লাখ, সিনোফার্মের টিকার ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৬০০ ডোজ এবং ফাইজারের টিকার ১ লাখ ৬২০ ডোজ পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও ৬০ লাখ ২০ হাজার ৮২০ ডোজ ফাইজারের টিকা প্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ক্রয়চুক্তির আওতায় ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি, চীনের সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে ৭ কোটি ৭০ লাখ ডোজ টিকা ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাশিয়া থেকে ১ কোটি ডোজ স্পুৎনিক-ভি টিকা ক্রয়ের চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ৩ কোটি ডোজ সিনাফার্ম ও ৭ কোটি ৫০ লাখ ডোজ সিনোভ্যাক টিকা ক্রয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৭০ মিলিয়ন ডোজ জনসন অ্যান্ড জনসন টিকা, ৩০ মিলিয়ন ডোজ সিনোফার্ম এবং ৭৫ মিলিয়ন ডোজ সিনোভ্যাক টিকা কোভ্যাক্স থেকে ক্রয়ের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানো হয়েছে। প্রতি মাসে যাতে এক কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিনোফার্ম থেকে প্রদত্ত শিডিউল অনুযায়ী আগামী অক্টোবর মাস থেকে প্রতি মাসে ২ কোটি হিসেবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ কোটি টিকা পাওয়া যাবে।’
চলমান টিকা কার্যক্রম জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সব বিভাগীয় সদর, জেলা সদর ও উপজেলা সদরে অবস্থিত ৬৭৩টি টিকাকেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। টিকা প্রদান কেন্দ্র ইউনিয়ন পর্যায়ে বিস্তৃত করা হয়েছে। টিকা প্রদানে প্রয়োজনীয় জনবলকে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গত ৭ আগস্ট টিকা ক্যাম্পেইন চলার সময় এক দিনে ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৬৩২ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান এই সংসদ নেতা।