fbpx

প্রযুক্তির পাতায় ২০২০

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে হারিয়ে গেলো আরও একটি বছর। ২০২০ সালটি নানা কারণে সবার কাছে সমালোচিত। এই বিশেই করোনা একা শাসন করে গেছে গোটা বিশ্বকে। বিশ্বে সে নানা তাণ্ডব চালিয়ে সবার জীবন তছনছ করে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও।

তেমনি প্রযুক্তি বিশ্বে এবছর ঘটেছে নানা রদবদল। করোনার কারণে সবার জীবন যখন স্থবির, তখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে মানুষের চিরায়ত অভ্যাসরীতি।

করোনার প্রকোপে মানুষের জীবনে বিশাল জায়গা করে নিয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি। এরই বদৌলতে দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে পড়ে অনলাইননির্ভর। যার প্রভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসহ মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়ে যায়। আর অনলাইনে ক্লাস চালু হওয়ায় স্মার্টফোনের বিক্রিও বেড়ে যায়। অনেকেই পুরো বছর জুড়ে হোম অফিস করেছেন।

এছাড়া এসময়টিতে রাজত্ব করেছে ই-কমার্স সাইটগুলো। লকডাউন থাকার কারণে মানুষের কেনাকাটা হয়ে যায় অনলাইনকেন্দ্রিক। এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা,সেমিনারসহ সংবাদ সম্মেলন—সব হতে থাকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে।

শুধু বেসরকারি খাতেই নয়, প্রযুক্তির এই ছোঁয়া লাগে সরকারি অফিসগুলোতেও। সরকারের মন্ত্রিসভার নানা বৈঠক হয় অনলাইনে। এছাড়া করোনার এই সময়ে সরকার ৭ মাসে ১০ লাখ ই-ফাইলের কাজ করে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, করোনাকালে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ, ই-কমার্সে কেনাকাটা বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৫০ লাখ। আর দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা হয় এই তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করেই।

এই প্রতিবেদনে আমরা ২০২০ সালে ঘটিত তথ্য প্রযুক্তি এবং টেলিকম খাতের আলোচিত কিছু বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরবো।

দেশের তৃতীয় সাবমেরিন প্রকল্পের অনুমোদন

দেশের তৃতীয় সাবমেরিন প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন’ শীর্ষক এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)।

প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা। যেখানে সরকার ৩০১ কোটি টাকা দেবে এবং বাকি ৩৯২ কোটি টাকা দেবে বিএসসিসিএল। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত সি-মি-উই-৬ সাবমেরিন ক্যাবলটি ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এর কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিসর ও ফ্রান্সে। আর বাংলাদেশের শাখাটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারের কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

অবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধে চূড়ান্ত কার্যক্রম শুরু

বিটিআরসির নানা চেষ্টার পর অবশেষে অবৈধ, নকল ও চুরি যাওয়া মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধের প্রচেষ্টা বাস্তবায়িত হয় ২০২০ এ। ২৫ নভেম্বর বিটিআরসির সঙ্গে চুক্তি করে সিনেসিস আইটি। র‌্যাডিসন টেকনোলজি ও কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড এদের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারের কাজ করবে।

ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যক্রম চালুর কথাচুক্তি স্বাক্ষরের দিন থেকে ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে।

এই প্রযুক্তি চালু হলে অবৈধ পথে দেশে আসা, ক্লোন বা চুরি করা হ্যান্ডসেটে মোবাইল নেটওয়ার্কে যোগাযোগ করা যাবে না। এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে সরকার এই খাত থেকে প্রতিবছর চার হাজার কোটি টাকার মতো বাড়তি রাজস্ব পাবে।

আইএসপিএবির ঝুলন্ত তার আন্দোলন

দেশের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা সারা দেশে ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ বন্ধের হুমকি দিয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলনে নামেন।

গ্রাহক পর্যন্ত সংযোগ স্থাপনে ঝুলন্ত তারের বিকল্প ব্যবস্থা না করে তার কাটায় তারা এক সংবাদ সম্মেলন করে ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ বন্ধ করার এই কর্মসূচি দিয়েছিলেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৮ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সারা দেশে বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যাংকসহ সব পর্যায়ে ইন্টারনেট ডাটা কানেকটিভিটি এবং ক্যাবল টিভি বা ডিশ বন্ধ রাখার কর্মসূচি ছিল।

পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক, টেলিযোগাযোগ সচিব মো. আফজাল হোসেনসহ দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে আইএসপিএবি বৈঠক করে মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয় এবং তারা এ কর্মসূচি তুলে নেয়।

পুঁজিবাজারে রবি

অবশেষে ২০২০ সালের মার্চে পুঁজিবাজারে আসার জন্য আবেদন করে দেশের অন্যতম মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রবি। পরে ১০ টাকা হিসেবে প্রতি শেয়ারে ওই মূলধন তোলার জন্য বিএসইসি ২৩ সেপ্টেম্বর রবির আইপিও অনুমোদন করে। ৫২৩.৭ কোটি টাকার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে বৃহত্তম ইস্যু নিয়ে যাত্রা শুরু করে রবি। ফলে আইপিও কেনার জন্য আবেদন পড়েছিল ৫.৭৪ গুণ বেশি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে রবির লেনদেন শুরু হয় ২৪ ডিসেম্বর।

ভার্চুয়াল ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড

তথ্য প্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড। প্রতিবছর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে। কিন্ত এ বছর করোনার কারণে বড় পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয় নি। ডিসেম্বরের শুরুতে এবার ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয় ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০’। ৯ থেকে ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা।

এই মেলায় দর্শনার্থীদের অ্যাপের মাধ্যমে পুরো প্রদর্শনী ঘুরে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সোশ্যালি ডিস্ট্যান্স, ডিজিটালি কানেক্টেড। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন। বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক ২৪টি সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়।

ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে তাদের পরিচয়পত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। নভেম্বরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে ভার্চুয়াল আইডি কার্ড পোর্টালের উদ্বোধন করেন।

দেশের প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সারকে ভার্চুয়াল কার্ড দেওয়ার পোর্টাল চালু করা হয়। যেসকল ফ্রিল্যান্সরা বছরে এক হাজার ডলার আয় করেছেন, তারাই এই আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ভার্চুয়াল আইডি কার্ডধারী আইটি ফ্রিল্যান্সাররা এই কার্ড দিয়ে ঋণ সুবিধা ও ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

উইটসায় বাংলাদেশের ছয় প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার
মালেয়শিয়ায় অনুষ্ঠিত তথ্য-প্রযুক্তির অলিম্পিকখ্যাত ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (ডাব্লিউসিআইটি) সম্মেলনে বাংলাদেশের ছয় প্রতিষ্ঠান ‘উইটসা গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স’ পুরস্কার পায়।

এই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো চারটি বিভাগে রানার-আপ এবং দুটি বিভাগে মেরিট পুরস্কার পেয়েছে।

উইটসার এই গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২০-এ মোট ১০টি বিভাগে ১০ চ্যাম্পিয়ন ও রানার-আপ এবং ২১টি মেরিট পুরস্কার ছিল।

রানার-আপ পুরস্কার পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- কোভিড ১৯ টেক সলিউশনস ফর সিটিজ অ্যান্ড লোকালিটিজ বিভাগে সিনেসিস আইটি লিমিটেড ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের এটুআই এর যৌথ প্রকল্প, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিভাগে সরকারের ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ একাডেমি (আইডিয়া) প্রকল্প, ইনোভেটিভ ই-হেলথ সলুসনস বিভাগে মাইসফটের মাই হেলথ বিডি, ভার্চ্যুয়াল হসপিটাল অব বাংলাদেশ এবং ই-এডুকেশন অ্যান্ড লার্নিং বিভাগে বিজয় ডিজিটাল অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে।

আর মেরিট বিভাগে ডিজিটাল অপরচুনিটি অর ইনক্লুশন বিভাগে নগদ এবং সাসটেইনেবল গ্রোথ বিভাগে ডিভাইন আইটি লিমিটেডের প্রিজম ইআরপি এই পুরস্কার অর্জন করে।

বাংলাদেশে ফেসবুকের মামলা
চলতি বছর প্রযুক্তি বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল বাংলাদেশে ফেসবুকের মামলা। ফেসবুক ডটকম ডটবিডি (facebook.com.bd) এই ডোমেইন উদ্ধারে বাংলাদেশে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ।

গত ২৩ নভেম্বর ঢাকা জেলা জজ আদালতে ট্রেডমার্ক অ্যাক্ট ৯৬ ও ৯৭ ধারায় এবং ফৌজদারি আইনের ১৫১ ধারায় এস কে সামসুল আলমের বিরুদ্ধে ফেসবুক এ মামলা করে।

২০০৮ সালে বিটিসিএল থেকে এস কে সামসুল আলম ফেসবুক ডটকম ডটবিডি ডোমেইনটি বরাদ্দ নেন। এস কে সামসুল আলম এওয়ান সফটওয়্যার লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও। তিনি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এবং কল সেন্টার ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত।

এর আগে, এই ডোমেইন বন্ধ করার জন্য তাকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছিলো ফেসবুক। পরে তিনি ফেসবুক ডটকম ডট বিডি নামের ডোমেইনটি বিক্রির জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপনও দেন। যার দাম ধরা হয় ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫১ কোটি টাকা।

২০১৬ সালের শেষ দিকে বিষয়টি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে তারা ডোমেইনটি বন্ধ করার জন্য আইনি নোটিশও পাঠায়। তবে তা বন্ধ করা হয়নি। পরবর্তীতে ফেসবুক বাধ্য হয়ে মামলা করে।

পরে বাংলাদেশে ফেসবুক ডটকম ডটবিডি ব্যবহারে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত ডোমেইন ব্যবহারের এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply