সম্প্রতি ফেসবুকের মূল কোম্পানির নাম বদলে হয়েছে ‘মেটা’। এ নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা-সমালোচনাও। তবে মেটাভার্স নিয়ে শুধু মার্ক জাকারবার্গ একাই নয়,বেশিরভাগ টেক জায়ান্ট এখন এই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছেন।
মেটাভার্স হলো এমন একটি অনলাইন দুনিয়া, যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক। বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা এ ধরনের স্থানে কন্টেন্ট শুধু দেখা নয়, তাতে পুরোপুরি নিজেকে নিমজ্জিত করে ফেলতে পারবেন, ঘুরে বেড়াতে পারবেন ওই ডিজিটাল দুনিয়ার মধ্য দিয়ে।
রয়টার্স বলছে, এই প্রযুক্তি পুরোপুরি আয়ত্তে আসতে দশ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে। একইসঙ্গে প্রযুক্তি জায়ান্টদের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বে।
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রাউন্ডহিল ইনভেস্টমেন্ট চলতি জুনে মেটাভার্স নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড’ (ইটিএফ) গঠন করেছে। ফেসবুক নিজেদের রিব্র্যান্ডিংয়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই আরেকটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব মেটাভার্স ইটিএফ গঠন করেছে বলেও জানা গেছে। চলুন জেনে নেই, কোন কোন প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।
রোব্লক্স
এই তালিকায় প্রথমেই আছে রোব্লক্সের নাম। চলতি বছর পাবলিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেয়ার বাজারে পা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোব্লক্সের দৃষ্টিতে মেটাভার্স এমন একটি স্থান যেখানে লাখো মানুষ থ্রিডি অভিজ্ঞতায় শিখতে, কাজ করতে, খেলতে, সৃজনশীল এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে।এরা ব্যবহারকারী ও ডেভেলপারদের ডিজিটাল বিশ্ব তৈরির ব্যবস্থা করে দিতে চাইছে।
প্রতিষ্ঠানটি প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে কেনাকাটা ও ব্যবসার মতো কাজও করা যাবে তাদের প্ল্যাটফর্মে। প্ল্যাটফর্মটিতে এখই ‘রোবাক্স কারেন্সি’ নামে ভার্চুযাল অর্থ রয়েছে। সেটি খরচ করেই সব করতে হয় সেখানে।
মাইক্রোসফট
মাইক্রোসফটও এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই। চলতি বছরেই মাইক্রোসফট প্রধান নির্বাহী সাত্যিয়া নাদেলা জানান, ‘এন্টারপ্রাইজ মেটাভার্স’ তৈরিতে কাজ করছে তার প্রতিষ্ঠান, সেখানে বাস্তব ও ডিজিটাল দুনিয়া এক হয়ে যাবে।
ফেসবুক
মেটাভার্স শব্দটিকে সবার সামনে জনপ্রিয় করেছে মূলত ফেসবুক। পরিকল্পনা জানানো থেকে শুরু করে নাম পরিবর্তন– অনেক কিছুর মধ্য দিয়েই গোটা বিষয়টিকে বারবার তুলে ধরছে এই টেক জায়ান্ট।
ডিসেম্বর থেকে ‘মেটা প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে ব্যবসা শুরু করবে ফেসবুক। তবে, নিজেদেরকে মেটাভার্স প্রতিষ্ঠানের বদলে সামাজিক মাধ্যম হিসেবেই দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।
এনভিডিয়া
কম্পিউটার চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া-ও মেটাভার্স নিয়ে কাজ করছে। থ্রিডি বিশ্বকে একটি ‘শেয়ারড ভার্চুয়াল ইউনিভার্সে’ আনতে নিজেদের ‘অমনিভার্স’ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তারা বলছে, বাস্তব বিশ্বের কারখানা ও ভবনের সিমুলেশন তৈরির মতো কাজে ব্যবহৃত ‘অমনিভার্স’ মেটাভার্স তৈরির পরীক্ষামূলক ধাপ হতে পারে।
ইউনিটি সফটওয়্যার ইনকর্পোরেটেড
এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত ভিডিও গেম নির্মাণে ব্যবহৃত সফটওয়্যার তৈরি করে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, মেটাভার্স তৈরিতে এরা টুল ও প্রযুক্তি বিক্রি করতে পারে।
স্ন্যাপ
দীর্ঘ সময় ধরেই ‘কাস্টোম অ্যাভাতার’ ও অগমেন্টেড রিয়ালিটি ফিল্টার তৈরি করে আসছে স্ন্যাপ। এ বছরই এটি নিজেদের প্রথম অগমেন্টেড রিয়ালিটি চশমা নিয়ে এসেছে। আপাতত ডেভেলপাররা সেটি চশমার নানাবিধ অভিজ্ঞতা তৈরির জন্য ব্যবহার করতে পারছেন বলে জানা গেছে।
অটোডেস্ক
এটি মূলত ক্লাউড সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান। ভবন ও পণ্যের নকশার কাজে এর প্রোগ্রাম ব্যবহার করে থাকেন স্থপতি ও প্রকৌশলীরা। গেমিং ও বিনোদনের ভার্চুয়াল জগত তৈরিতেও প্রতিষ্ঠানটির সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।
টেনসেন্ট
আয়ের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও গেমিং প্রতিষ্ঠান চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। তাদের এপিক গেমস এবং অ্যাক্টিভিশন ব্লিজা্র্ডের মতো মূল সারির গেইমিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে শেয়ার রয়েছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে এ বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি নিজ সামাজিক সাইট কিউকিউ-এর জন্য মেটাভার্স-সংশ্লিষ্ট ট্রেডমার্কের নিবন্ধন করিয়েছে।
এপিক গেমস
মেটাভার্সের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত যে নাম, সেটি হলো এপিক গেমস। ফোর্টনাইট নির্মাতা এ প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের মূল শুটিং গেম থেকে সরে দাঁড়িয়ে নাচ, ভার্চুয়াল কনসার্ট ইত্যাদির আয়োজন করে দেখিয়েছে।
‘আনরিয়াল’ নামের নিজস্ব গেমিং ইঞ্জিনও রয়েছে এপিক গেমসের। এটি ব্যবহার করে গেম তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানের ভিজুয়াল ইফেক্ট তৈরি করা হয়।
অ্যাপল ও গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় মাপের সমালোচক বলা চলে এপিক প্রধান টিম সুইনি-কে। তার মতে, মেটাভার্স একটি অংশগ্রহণমূলক উন্মুক্ত স্থান হওয়া উচিত।
অ্যামাজন
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন। মেটাভার্স দৌড়ে খেলোয়াড় হিসেবে তারাও পিছিয়ে থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।