যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার দায়ে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চৌভিনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগের সবগুলোই আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। আর তাই চৌভিনের ৪০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) ১২ সদস্যের জুরির একটি প্যানেল এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলায় ডেরেক চৌভিনকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডিগ্রি হত্যা এবং দ্বিতীয় ডিগ্রি বেআইনিভাবে অনিচ্ছাকৃত হত্যা হিসাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। রায়টি সঠিক কিনা তা জানতে জুরিদের পরামর্শ নেওয়া হয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন তাদের খবরে মঙ্গলবার এসব তথ্য জানায়।
সিএনএন তাদের খবরে জানিয়েছে, মিনেসোটার হেনেপিন কাউন্টি আদালত ডেরেক চৌভিনকে দোষী সাব্যস্ত করে আইন অনুযায়ী ‘সেকেন্ড ডিগ্রি’ অনিচ্ছাকৃত খুনের জন্য সর্বোচ্চ ৪০ বছর, ‘থার্ড ডিগ্রি’ খুনের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়। অন্যদিকে, ‘সেকেন্ড ডিগ্রি’ নরহত্যার দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার ডলার জরিমানাও করা হয় চৌভিনকে। এ সময় আদালত জানায়, আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে চৌভিনের কারাদণ্ডাদেশ ঘোষণা করা হবে।
এদিকে, ডেরেক চৌভিনকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। আদালতের রায় ঘোষণার পর চৌভিনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে ২০২০ সালের ২৫ মে ৪৬ বছর বয়সী ফ্লয়েডকে জাল টাকা ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে মিনিয়াপোলিস পুলিশ। গ্রেফতারের সময় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফ্লয়েডকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় ডেরেক চৌভিন মাটিতে শুইয়ে তার ঘাড়ে প্রায় ৯ মিনিট চেপে ধরে বসেন। সে সময় বারবার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বলার পরও ফ্লয়েডের ঘাড় থেকে নামেননি চৌভিন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে ফ্লয়েডকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ জর্জ ফ্লয়েড। ছবি: টুইটার
ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ শিরোনামে এ আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানাও ছাড়িয়ে যায়।
মঙ্গলবারের রায় ঘোষণার পরপরই আদালতের বাইরে থাকা ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকারীরা উল্লাস প্রকাশ করেন। ন্যায়বিচার হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এ রায়ের বিষয়ে এক টুইট বার্তায় নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘বিচারকেরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে যথাযথ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আরও বেশি কিছু করা প্রয়োজন।’
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় নাগরিক আন্দোলন শুরু হয়। শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ-নৃশংসতার অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নগরীতে পুলিশে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি পুলিশি ব্যবস্থার জন্য রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে।এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ চলছে আমেরিকার পুলিশ ইউনিয়নগুলোর মধ্যে।
ধারণা করা হয়, গত জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারসহ নানা ধরনের নাগরিক আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে। নির্বাচনপরবর্তী সময়ে আমেরিকায় বেশ কিছু বর্ণবিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনাও ঘটে।সে সময় পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ অনেকের মৃত্যু হয়। এসব কারণে এ মামলার রায় আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।
