fbpx

বাঁশির সুরে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি বসে মাহাতাবের শরীরে

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বাঁশির সুর শুনে মোহিত হয়ে জার্মানির ছোট্ট শহর হ্যামিলিয়নে এক বহুরূপীর পিছু নিয়েছিল লাখ লাখ ইঁদুর। সেটি রূপকথার গল্প হলেও বাস্তবে সেরকম একটি ঘটনা ঘটেছে যশোরের কেশবপুরের এক গ্রামে।

বাঁশির সুরে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি বসছে মাহাতাব মোড়লের শরীরে। না কোন মধু নয়, কোন মন্ত্র নয়, নয় কোন ওষুধ বা সুগন্ধি। মৌমাছির ভিড়ে একসময় দেখা যায় না তার অবয়ব।
এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখতে আশেপাশের গ্রামের মানুষ ভিড় জমিয়েছে কেশবপুর উপজেলার হাসানপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামের মাহাতাবের বাড়িতে। মৌমাছির সাথে এই সখ্যতায় এলাকাবাসী এখন তাকে চেনে ‘মৌমাছি মাহাতাব’ নামে।

বাঁশির সুরে মৌমাছি বসতে বসতে শরীরটাকেই একসময় মৌমাছির চাকের আকার ধারণ করে। বাঁশি বাজানো বন্ধ করলেই মৌমাছিরা আবার দলবেধে পালায়।

মৌমাছিরা শরীরে কামড় দেয় কি না, জানতে চাইলে মাহাতাব বলেন, এর জন্য শরীরকে আগে থেকেই প্রস্তুত করতে হয়। তাদের আঘাত না করলে একটি মৌমাছিও শরীরে হুল বসায় না। মৌমাছি হিংস্রতা দেখালেও তার কাছে মৌমাছির হিংস্র আচরণ কখনোই চোখে পড়েনি। ভালোবেসে সব হিংস্রতা জয় করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

তিনি জানান, এক বছর ধরে মৌমাছির সঙ্গে কৌশলগত সখ্য থাকলেও মৌমাছির সঙ্গে গভীর প্রেম সেই ছোটবেলা থেকেই। এটি কেবল মৌমাছির প্রতি ভালোবাসা থেকেই করা সম্ভব হয়েছে।

মাহাতাব বলেন, সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলায় তার জন্ম। ছোটবেলায় সুন্দরবনসহ সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর অঞ্চলে বাবার সঙ্গে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের কাজ করেছেন।
মৌচাক থেকে মধু সংগহ করতে গিয়ে মৌমাছির প্রতি আলাদা আগ্রহ জন্ম নিয়েছে, সাথে ভালোবাসাও।

এলাকাবাসী জানায়, বাবা মৃত কালাচাঁদ মোড়লের সাথে ছোটবেলায় যখন মৌচাক থেকে মধু আহরণের কাজ শেখেন, তখনই বালতিতে শব্দ করে চাক থেকে মৌমাছি দূরে সরিয়ে দেওয়ার কৌশলও রপ্ত করেন তিনি। এরপর টিনের থালায় শব্দ শুনে মৌমাছি চাক ছেড়ে তার কাছে আসতে শুরু করে। কাছে আসার এমন দৃশ্য থেকে মধু সংগহকারী এ পতঙ্গের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়।

মধু সংগ্রহের কাজ করেই স্ত্রী ও দুই সন্তাসহ সংসার চালান মাহতাব। প্রথমদিকে স্ত্রী ফুলজান বেগম বিরক্ত হলেও এখন মানুষের আগ্রহ দেখে ভালো লাগে তার। মৌমাছিরা কামড় দিলে তো মারাও যেতে পারে, এই ভয়েই বিরক্ত হতেন বলে জানিয়েছে ফুলজান বেগম।

এলাকার তোফাজ্জেল হোসেন মানিক বলেন, আমি শুনেছি মাহাতাব নাকি বাঁশি বাজিয়ে মৌমাছি নিয়ে আসেন। তাই দেখতে এসেছি। এত দিন শুনেছি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প, আজ নিজ চোখে দেখলাম মৌমাছির বাঁশিওয়ালা।

প্রতিবেশী সালাম হোসেন জানান, মাহাতাব দীর্ঘদিন ধরে মধু সংগ্রহ করে আসছেন। মধু সংগ্রহের ফলে মৌমাছি সম্পর্কে তার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে এই মৌমাছির সঙ্গে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করতে পেরেছেন তিনি। বাঁশি বাজিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি উড়িয়ে তার শরীরে নিয়ে আসেন। সরাসরি এই দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না কেউ।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মোশাররফ হোসেন জানান, মাহাতাব যখন বাঁশির সুর তোলে, তখন সারা শরীরে মৌমাছি উড়ে এসে মাহাতাবের শরীরে জড়ো হয়। দৃশ্যটি দেখে হতবাক হয়েছি। তবে মাহাতাবের এই কাজের মধ্যে কোনো কৌশল বা লুকোচুরি আছে কি না, বলতে পারব না।

যশোর সরকারি মহিলা কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নার্গিস শিরীন বলেন, মৌমাছিদের মধ্যে নিজস্ব ভাষা আছে। তারা ওই ভাষাতেই একে ওপরের সঙ্গে কথা বলে। তবে বাঁশির সুরে মৌমাছি আকৃষ্ট হয়, এটা আমার জানা নেই। আমি বইপুস্তকেও এটা পাইনি। বাঁশির সুরে মৌমাছি আকৃষ্ট হয়ে মানুষের গায়ে উড়ে এসে বসে, এটার সুযোগ নেই।
তবে মৌমাছিরা তো মধুর ওপর আকৃষ্ট হয়, তাই কেউ যদি তার শরীরে মধু, হরমোনযুক্ত সুগন্ধি স্প্রে করে, তখন উড়ে এসে মৌমাছিরা বসতে পারে বলেও জানিয়েছেন নার্গিস শিরীন।

Advertisement
Share.

Leave A Reply