fbpx

বাংলাদেশের ক্যান্সার রোগীদের নতুন আশা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

প্রোটন থেরাপি এক ধরনের রেডিয়েশন থেরাপি, যেখানে প্রোটন নামের ক্ষুদ্রকণার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের বিনাশ ঘটানো হয়। প্রোটন যদিও এ যুদ্ধে প্রয়োজনীয় রসদের জোগান দেয়, তবে এটি, ফোটন থেরাপির মতো, আক্রান্ত টিস্যুর আশেপাশে অন্যান্য সুস্থ টিস্যুর কোনো ধরনের ক্ষতি করে না। ফলে পারিপার্শ্বিক ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় এতে ক্ষতিকর টিউমারের বিনাশ ঘটাতে উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশন প্রয়োগ করা সম্ভব হয়।

দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র প্রোটন থেরাপি সেন্টার ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টার (এপিসিসি)। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের সামনে বাংলাদেশের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় প্রোটন বিম থেরাপি প্রয়োগের নতুন দিগন্ত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। রাজধানীতে বনানীর এরিয়াল শেরাটনে ওই আয়োজনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারের সিনিয়র কনসালট্যান্ট রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট ডা. স্বপ্ন নানজিয়া।

দেশে ক্যান্সারের দ্রুত ক্রমবৃদ্ধি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি প্রোটন বিম থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে কীভাবে জটিল প্রকৃতির ক্যান্সার কোষকেও নিখূঁতভাবে নিরাময় করা সম্ভব হচ্ছে, সে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন তিনি। পাশাপাশি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসার নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার ঘটনা তুলে ধরেন জামাল উদ্দিন, নূর ই তামান্না এবং মোজাম্মল হক চৌধুরী।

প্রোটন থেরাপি নিয়ে মন্তব্য খরতে গিয়ে মাথা, গলা, স্তন এবং জরায়ুসংশ্লিষ্ট ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ ডা. স্বপ্ন নানজিয়া বলেন, অনেকেই জানে না, ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রোটন প্রযুক্তির প্রয়োগের ইতিহাস কিন্তু শুরু হয় ১৯৪০ এর দিকে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ প্রোটন বিম থেরাপির আবির্ভাব। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় ইতোমধ্যেই অনন্য সাফল্য দেখিয়েছে প্রোটন থেরাপি। এ মুহূর্তে অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা করা হচ্ছে মাথা ও গলার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের। আগেকার চিকিৎসা-পদ্ধতির তুলনায় এতে চিকিৎসা চলাকালীন ও চিকিৎসা-উত্তর ভোগান্তি একেবারেই কম। রোগীকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা কিংবা নলের মাধ্যমে খাওয়ানোর মতো জটিল পরিস্থিতিরও প্রয়োজন পড়ে না। ডা. নানজিয়া জানান, অ্যাপোলোতে আমাদের রয়েছে সর্বাধুনিক পিবিএস প্রযুক্তি যার সুবাদে প্রতিটি টিউমারকে আমরা ধাপে ধাপে এবং স্তরের পর স্তর ভিত্তিতে পৃথকভাবে পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারি।

জামাল উদ্দিন অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারে তার চিকিৎসা লাভের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমি ফুসফুসের অসুখে ভুগছিলাম। ফুসফুসের আপার-লোবে একটি ৫-সেন্টিমিটার টিউমার ধরা পড়ে। পিইটি-সিটি করার পর ২০টি প্রোটন বিম থেরাপি নিতে বললেন ডা. শ্রীনিবাসন। পাশাপাশি ছয়টি কেমোথেরাপি নিতে বললেন ডা. টি রাজা। প্রোটন থেরাপির সাথে তখনও পরিচয় ছিল না আমার। অভয় দিয়ে আমাকে বলা হলো, কোনো পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

এমন কী ক্যান্সারের আবার ফিরে আসার আশঙ্কাও প্রায় শূন্য। ২০২০ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলল চিকিৎসা। চার মাস পর এপিসিসি গেলাম আবার। পিইটি-সিটি পরীক্ষায় টিউমারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না। কারসিনোমারও কোনো হদিস মিলল না। ছয় মাস পর ফলোআপ করতে ফের গেলাম চেন্নাই। ক্যান্সার কোষের কোনো অস্তিত্ব নেই। এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ, একেবারেই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছি। আমার প্রায় অলৌকিক এ আরোগ্যের জন্য আমি এপিসিসির প্রতি কৃতজ্ঞ।

অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টার (এপিসিসি) ভারতের প্রথম জেপিআই অনুমোদিত ক্যান্সার হাসপাতাল। তার সাফল্যের মুকুটে সর্বশেষ সংযোজিত নতুন পালকটির নাম ভারতের প্রথম এবং একমাত্র সাইট-স্পেসিফিক রোবোটিক অনকোলজি প্রোগ্রাম।

Advertisement
Share.

Leave A Reply