fbpx

বাচ্চাকে রোজ অন্তত একটি গল্প পড়ে শোনান

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

ছোট্ট সানির আম্মু তার অফিসের কলিগদের সাথে গল্প করছেন। বলছেন, ‘আমি আর আমার হাসবেন্ড দুই জনেই চাকরি করি। আমাদের ছেলের বয়স ৪। কি যে লক্ষী জানেন! ওকে একটা ট্যাব কিনে দিয়েছি। কোনো দুষ্টুমি করলে বা খেতে না চাইলে বা ঘুমাতে না চাইলে ইউটিউবে কার্টুন ছেড়ে দেই। সাথে সাথে একদম লক্ষী হয়ে যায়। চুপচাপ সেদিকে মন দেয়। আমরা না থাকলে কাজের মেয়েটা ছেড়ে দেয়। ও মনোযোগ দিয়ে দেখে। আমরা যে বাসায় নেই মনেই থাকে না ওর। কাউকে জ্বালায় না একদম। কার্টুন এ ডুবে থাকে।’

একজন কলিগ বলে উঠলেন, ‘খুব সাবধানে দেখান তো? সব কার্টুন কিন্তু বাচ্চাদের উপযোগী না।’

সানির মা লাফ দিয়ে বললেন, ‘কি যে বলেন; আমি অনেক বেছে বেছে প্লে লিস্ট তৈরি করি। সানি কত কিছু যে এসব কার্টুন দেখে শিখেছে। কি আর বলব!’

বাচ্চাকে রোজ অন্তত একটি গল্প পড়ে শোনান

রোজ রোজ গল্প বলে শোনান। তা বাচ্চাকে আরো সাহসী করবে। ছবি : সংগৃহীত

সানির মায়ের এই গল্পটা আরও অনেক মায়ের জন্যই সত্য। ব্যস্ততার অজুহাতে বাচ্চাকে শিক্ষা দেবার দায়িত্ব ইদানিং টিভি বা ইউটিউবের উপর দিয়ে দিয়েছেন অনেক বাবা মা। এসব কার্টুন কিন্তু আসলেই খারাপ নয়। সত্যি সত্যি অনেক কিছু শিখবার আছে। কিন্তু পুরোপুরি এর উপর মেধা বিকাশের দায়িত্ব দেয়া কি ঠিক?

বাচ্চাকে রোজ অন্তত একটি গল্প পড়ে শোনান

রোজ রোজ গল্প বলে শোনানোর কিছু একাডেমিক উপকারিতাও আছে। ছবি : সংগৃহীত

ব্যস্ত বুঝলাম। অন্তুত রাতে ঘুমাতে যাবার আগে তো বাচ্চাকে কোলে নিয়ে একটা গল্প বলতে পারেন। এই সময়টুকু তো বের করতেই হবে। যে বাচ্চাটা রোজ রোজ কার্টুন কিংবা টিভি দেখে ঘুমাতে যায় তার তুলনায় যে বাচ্চা তার বাবা বা মায়ের কাছ থেকে রোজ একটা গল্প শুনে ঘুমাতে যায় তাদের মধ্যে বেশ কয়টি বিষয়ে অবশ্যই পার্থক্য তৈরি হবে। সে কথাগুলোই থাকছে এ লেখায়।

বাচ্চাকে রোজ অন্তত একটি গল্প পড়ে শোনান

গল্প পৃথিবীর সব মহান ব্যাক্তিদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেবে আপনার বাচ্চার। ছবি : সংগৃহীত

আপনি যদি বিছানায় শুয়ে বাচ্চাকে খুব কাছে নিয়ে একটা বই হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকে তা পড়ে শোনান আপনার সাথে বাচ্চার একটা অসাধারণ বন্ধন তৈরি হয়। এমনটা বলছি না যে, আপনার সাথে আপনার বাচ্চার কোনো দৃঢ় বন্ধন নেই। কিন্তু ৫/৬ বছর পর্যন্ত বাচ্চারা বাস্তবতা আর ফিকশন এর মধ্যে সেভাবে পার্থক্য করতে পারে না। তাদের স্মৃতিতে গল্পগুলো এমনভাবে প্রভাব ফেলবে যেন এগুলো তার জীবনে সত্যি সত্যি ঘটেছে এবং সেই ঘটনাগুলোতে আপনিও তার সাথে উপস্থিত ছিলেন। স্মৃতির গভীরে এই অসাধারন একটা অনুভুতি আপনি গল্প না বলে কখনই তৈরি করতে পারবেন না।

আর রোজ বই হাতে গল্প পড়ে শোনান বাচ্চার পরবর্তী নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে সাহায্য করবে। যা খুবই প্রয়োজন আমাদের পরবর্তী জেনারেশনের জন্য। আমরা কিন্তু বই বিমুখ হয়ে পড়ছি।

আপনি যদি নিয়মিত আপনার বাচ্চাকে শুদ্ধ ও প্রমিত উচ্চারণে গল্প পড়ে শোনান এটা একই সাথে আপনার বাচ্চার শোনার দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং তার নিজের উচ্চারণ শুদ্ধ এবং প্রমিত হতে সাহায্য করবে। গল্পগুলো যদি আমাদের দেশিয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে প্রতিফলন করে তাহলে একই সাথে আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথেও তাদের একটা পরিচিতি হয়ে গেল।

বিদেশি ভিডিওগুলো যত ভালই হোক এই বিষয়টার ঘাটতি কিন্তু থেকেই যায়। গল্প পৃথিবীর সব মহান ব্যাক্তিদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেবে আপনার বাচ্চার। যার পজেটিভ প্রভাব পড়বে সে বেড়ে ওঠার পর।

গল্প বাচ্চাদের ইমাজিনেশন এবং চিন্তা শক্তিও বাড়িয়ে দিবে। আমরা যখন স্ক্রিনে কোনো কিছু দেখি তখন আমাদের ইমাজিনেশন সীমিত হয়ে পড়ে তবে যখন শুনি বা পড়ি তখন আমাদের মস্তিস্ক তার একটা ভিজুয়াল কল্পনা করে নেয় যা বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও হয় এবং মস্তিস্কের এই চর্চাটা বাচ্চার প্রতিভা এবং ক্রিয়েটিভিটি বিকাশে খুবই প্রয়োজনীয়।

একটা ভালো গল্প, যেখানে পজেটিভ মোরাল থাকে তা বাচ্চাদের মোরাল ডেভেলপমেন্ট এ এতটাই কার্যকর হতে পারে যা আপনি এমনিতে শুধু বুঝিয়ে ততটা কার্যকর করতে পারবেন না।

রোজ রোজ গল্প বলে শোনানোর কিছু একাডেমিক উপকারিতাও আছে। যেমন এটা আপনার বাচ্চার শব্দ ভান্ডার বাড়িয়ে তুলবে, সুন্দর ও সাবলীল বাক্য গঠনে সাহায্য করবে, বাচ্চার মেমরি ডেভেলপ করবে এবং অবশ্যই বাচ্চার ক্রিয়েটিভিটি বৃদ্ধি করবে। যা পরে স্কুলে আপনার বাচ্চাকে একধাপ এগিয়ে দেবে।

বাচ্চাকে রোজ অন্তত একটি গল্প পড়ে শোনান

গল্প বাচ্চাদের ইমাজিনেশন এবং চিন্তা শক্তিও বাড়িয়ে দিবে। ছবি : সংগৃহীত

রোজ রোজ গল্প বলে শোনান। তা বাচ্চাকে আরো সাহসী করবে। পরবর্তী জীবনে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বা কোনো চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হতে। কিভাবে? কারণ, ভেবে দেখুন বাচ্চাদের প্রতিটি গল্পেই কিন্তু একটা সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ থাকে। গল্পের মূল চরিত্র বা হিরো/ হিরোইন কিন্তু সেই সমস্যা বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এবং গল্পের শেষে কিন্তু তারা সেটা যত কষ্টই হোক সমাধান করে এবং চ্যলেঞ্জকে জয় করে। এই সাহস এবং শিক্ষা কিন্তু গল্প থেকে আপনার বাচ্চার মধ্যে সঞ্চারিত হবে। যা বাস্তব জীবনে তাকে সাহসী করে তুলবে। আমি পারি না, আমি কখনও করি নাই। এসব নেগেটিভ কথা তার মাথা থেকে ১০০ হাত দুরে চলে যাবে।

তাই ইউটিউব আর মোবাইল গেমস এর উপর বাচ্চার দায়িত্ব পুরোপুরি না দিয়ে একটু কষ্ট হলেও নিজেই বাচ্চাকে রোজ অন্তত একটি গল্প পড়ে শোনান।

লেখক : তানজীল হাসান, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, সুপার কিড

Advertisement
Share.

Leave A Reply