মঙ্গলবার মোবাইল ব্যাংকিং এর একটি দোকান থেকে ১৪ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করেন খিলক্ষেতের বাসিন্দা আবদুল মালেক। পরদিন অর্থাৎ বুধবার অপরিচিত একটি নম্বর থেকে আসে ফোন। বলা হয়, টাকা লেনদেনের প্রক্রিয়াটিতে একটি ভুল হয়েছে, যার কারণে ওই দোকানে যারা যারাই টাকা ট্রান্সফার করেছেন, প্রত্যেকের নম্বর কয়েকদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আবদুল মালেক মুহূর্তেই বুঝতেই পারেন, এটি একটি প্রতারকের কল। যিনি প্রতারণার মাধ্যমে তার পিন নম্বর বা কোড নম্বর পাঠিয়ে সরিয়ে নেবেন অ্যাকাউন্টের সমস্ত টাকা।
অনলাইন প্রতারকদের বিষয়ে জানা আছে বলেই বিপদ আসেনি আব্দুল মালেকের। তবে দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রায় প্রতিদিনই অনলাইন প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে খোয়াচ্ছেন গাটের পয়সা।
বিকাশ প্রতারকরা গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করতে একেক সময় একেক রকম কৌশল অবলম্বন করেন। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের বেশিরভাগেরই সন্দেহ বিকাশ এজেন্ট কিংবা কোম্পানির ভেতরের লোকের প্রতি।
এ বিষয়ে রাজধানীর বেশকিছু অনলাইন ব্যাংকিং সেবা দেয় এমন দোকানে ঘুরে দেখা গেল, বেশিরভাগ ভোক্তাই একবার হলেও পেয়েছেন প্রতারকের ফোন। কেউ বুঝতে পেরেছেন। কেউবা না বুঝেই পিন নম্বর দিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীতে অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেছেন, কোন টাকাই আর অবশিষ্ট নেই। সব নিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। গ্রাহকদের অভিযোগের তীর বরাবরই এজেন্টদের প্রতি।
এ নিয়ে কথা হয়েছে বিকাশের কয়েকজন ক্ষুদ্র-ব্যবসায়ীর সাথে। তাদেরও আছে পাল্টা অভিযোগ। কেউ কেউ বলছেন, বিকাশ বা অনলাইন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই আছে প্রতারক চক্রের সদস্য। দোকান থেকে কখনোই নম্বর দেওয়া হয় না বলেও দাবি করেন তারা। একইসঙ্গে পুলিশের সাহায্যও চেয়েছেন এজেন্ট ব্যবসায়ীরা।
দেশের অন্যতম মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি, এমনকি মুঠোফোনে বক্তব্য রেকর্ড করতে চাইলেও আপত্তি জানান। ই-মেইলে সাদা কাগজে একটি সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দায় সারেন।
এসব প্রতারণার ঘটনায় অনলাইন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো দায় এড়াতে পারে না বলে বিবিএস বাংলাকে জানিয়েছেন ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ব্যাংক থেকে বেশি লেনদেন হয় অনলাইন ব্যাংকিং খাতে। ব্যাংকের মতো করে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এজেন্টশিপ দেওয়ার আগে তার নূন্যতম টেকনিক্যাল নলেজ আছে কিনা, শিক্ষিত কিনা, ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি অবকাঠামো আছে কিনা, সেসব নিশ্চিত করতে হবে। কোনভাবেই রাস্তায় একটি টেবিল নিয়ে কোন এজেন্ট হাজার হাজার টাকার লেনদেন করবে, এটি হতে দেওয়া যায় না। এজেন্টের দোকানে সিসিটিভি থাকলে নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়। কারণ কেউ টাকা পাঠাতে এলে আশপাশ থেকে কে তাকে ফলো করছে সেটি দেখা যায়। এছাড়া বিকাশ বা এ জাতীয় যারা অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তাদের উচিৎ এজেন্টদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া। নিরাপত্তা ও গ্রাহকের তথ্য নিরাপদে থাকার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’
প্রতারণার শিকার হলে যে কেউ থানায় যেয়ে একটি মামলা করতে পারবেন। সেটি পরবর্তীতে ডিবি বা সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট জমা দিবে। তবে প্রতারণার শিকার হয়ে বিচার চাইবার আগে ভোক্তাদের সচেতন থাকাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।