fbpx

মনে আছে বিশ্বের প্রথম ভ্যাকসিন উদ্ভাবককে?

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

১৮৯০ সাল। সারা বিশ্বে তখন কলেরার প্রকোপ। মারা যাচ্ছে লাখো মানুষ। প্রাণঘাতী এই রোগ থেকে মানুষকে বাঁচাতে উঠে পড়ে লেগেছেন রুশ বিজ্ঞানী ওয়াল্ডিমার হাভকিন। খোঁজেন প্রতিষেধক তৈরির পথ।

এক পর্যায়ে, কলেরার ব্যাকটেরিয়ার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করতে খরগোশের দেহে সংক্রমিত করলেন। এভাবেই এক দেহ থেকে অন্য দেহে সংক্রমিত করার প্রক্রিয়া চালালেন। এসময় লক্ষ্য করলেন, চল্লিশতম সংক্রমণ সম্পূর্ণ হলে কলেরার জীবাণু অত্যন্ত ভয়ানক হয়ে ওঠে। এরপর সংক্রমিত করলে খরগোশ প্রায় সাথে সাথেই মারা যায়। কিন্তু পেশির গভীরে সংক্রমিত না করে চামড়ার নিচে করলে জীবাণুর কার্যকারিতা কম হয়।

হাভকিন অন্ধকারেই আলোর পথ পেলেন। বিষ দিয়েই বিষ কাটানোর পথ খুঁজলেন। অর্থাৎ কলেরা জীবাণু দিয়েই এর ভ্যাকসিন তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু করেন।

মনে আছে বিশ্বের প্রথম ভ্যাকসিন উদ্ভাবককে?

১৮৯৪ সালে কলকাতায় হাভকিন। ছবি : সংগৃহীত

পরীক্ষায় দেখা গেলো, প্রায় ঊনচল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কলেরা জীবাণু বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। এই জীবাণু খরগোশ ও গিনিপিগের দেহে সংক্রমিত করে কার্যকর ফল পাওয়া গেল। এই জীবাণু প্রয়োগে প্রাণীগুলো যেমন সুস্থ হয়ে উঠলো, তেমনি বাড়লো প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

বিভিন্ন ধাপে পরীক্ষার পর এবার ভ্যাকসিনটি মানুষের দেহে প্রয়োগের পালা। তবে অন্যের দেহে প্রয়োগ করার ঝুঁকিতে গেলেন না হাভকিন। দুর্বল জীবাণুর টিকা নিজের দেহেই সংক্রমিত করলেন। এতে সামান্য অসুস্থতার পর সুস্থ হলে এবার সক্রিয় জীবাণু সংক্রমিত করলেন। ফলাফল বিস্ময়কর! রোগ দেখা গেলো না। এরপর এটি ব্যবহার করা হলো স্বেচ্ছাসেবকদের দেহে। সে ক্ষেত্রেও ভালো ফল পাওয়া গেলো।

মনে আছে বিশ্বের প্রথম ভ্যাকসিন উদ্ভাবককে?

হাভকিন স্মরণে ভারতের ডাকটিকেট। ছবি : সংগৃহীত

১৮৯৪ সাল। কলেরা রোগীর খোঁজে ভারতের কলকাতায় ছুটে আসেন তিনি। এখানেও কলেরার প্রাদুর্ভাবে মারা যাচ্ছিল শতশত মানুষ। চারজন ভারতীয় সহকর্মীকে নিয়ে রোগী দেখতে গেলেন হাভকিন। শুরুতে কেউই ভ্যাকসিন নিতে রাজি ছিলো না। তাই বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে চিকিৎকরা নিজেদের উপরই প্রথমে ভ্যাকসিনটির ব্যবহার করলেন। এরপর অনেকেই রাজি হলেন এটি গ্রহণে। রোগীদের সুস্থ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লো গোটা দেশে। হাভকিনের অদম্য পরিশ্রমে কলেরার মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলো।

এরপর, ১৮৯৬ সালে বোম্বেতে বিউবোনিক প্লেগের উপদ্রব দেখা গেলো। আবারও ছুটে যান হাভকিন। ঝাঁপিয়ে পড়লেন রোগ মুক্তির উপায় খুঁজতে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভিন্ন চড়াই উৎড়াই শেষে, ১৮৯৭ সালের ১০ জানুয়ারিতে, এবারও  নিজের দেহে ১০ সিসি প্লেগ জীবাণুর ভ্যাকসিন নেন। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রবল জ্বর ও ব্যথা দেখা দিল। তবে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন। এক সময় টিকা তৈরির বৈধতা মিললো।

তবে, ইংরেজদের রুশ বিদ্বেষের কবলে পড়লেন এই প্রাণী বিজ্ঞানী। ১৯০২ সালে টিকাদানে অনিচ্ছাকৃত একটি ভুলের জন্য তাকে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়।

১৯৩০ সালের ২৬ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডে মারা যান ইতিহাসের প্রথম দুটি ভ্যাকসিনের উদ্ভাবক ওয়াল্ডিমার হাভকিন। কোনো বাহবার জন্য নয়, মানুষকে ভালোবেসে আজীবন কাজ করে গেছেন কালজয়ী এই বিজ্ঞানী। তবে এই অবদান কতটা মনে রেখেছে বিশ্ব, প্রশ্ন তা নিয়েও।

Advertisement
Share.

Leave A Reply