২০২২ সালে বিশ্বে শীর্ষ ধনীদের তালিকা প্রকাশ করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। যেখানে দেখা গেছে, বিশ্বে শতকোটি ডলারের মালিকদের সংখ্যা কমেছে।
ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়, টানা দুই বছর ধরে করোনা মহামারির প্রভাব এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শীর্ষ ধনীদের সম্পদ কমেছে। এই তালিকায় চলতি বছর জায়গা করে নিয়েছে ২ হাজার ৬৬৮ জন যা গত বছরের তুলনায় ৮৭ জন কম।
এদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১২ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৪০০ বিলিয়ন বা ৪০ হাজার কোটি ডলার কম।
শীর্ষ ধনীর তালিকায় প্রথম জায়গা করে নিয়েছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক। দুই বছর তিনি রকেটের গতিতে আয় করেছেন, ফলে সম্পদও বেড়েছে সে হারে।
প্রতিবেদনে মাস্কের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি পৃথিবী ও মহাজগতের পরিবহনব্যবস্থা আমূল বদলে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। একইসাথে তিনি টেসলার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক গাড়ি এনে পরিবেশবান্ধব পরিবহনের দিকপাল হয়ে উঠেছেন, অন্যদিকে স্পেসএক্স কোম্পানির মাধ্যমে রকেট তৈরি করছেন। বর্তমানে তিনি টেসলার ২১ শতাংশ শেয়ারের মালিক। সম্প্রতি তিনি টুইটারের ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন।
ইলন মাস্ক জন্ম নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। ১৭ বছর বয়সে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি। এরপর পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলি ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন।
দ্বিতীয় স্থানে আছেন অনলাইন মার্কেটপ্লেস আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। ১৯৯৪ সালে তিনি আমাজন প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ২০২১ সালে তিনি আমাজনের ৮৮০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দেন। পরে প্রধান নির্বাহীর পদ ছেড়ে তিনি নির্বাহী চেয়ারম্যান হন। ২০১৯ সালে সাবেক স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি বেজোসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় জেফ বেজোসের। সেই সময় তিনি ম্যাকেঞ্জিকে আমাজনে নিজের শেয়ার থেকে ১৬ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করেন। এটি এখন বিশ্বে অন্যতম ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ হিসেবে পরিচিত।
বিশ্বে শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় এশিয়ার একজন জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি হলেন ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি। আম্বানির পেট্রোকেমিক্যাল, তেল, গ্যাস ও টেলিকম খাতে ব্যবসা আছে । গত কয়েক বছরে তার টেলিকম সাম্রাজ্য অনেকটাই বেড়ে গেছে। আর করোনাকালীন রিলায়েন্সে ফেসবুক ও গুগল বিনিয়োগ করেছে। ফলে গত দুই বছরে তার সম্পদ বেড়েছে।
ফোবর্সের তালিকায় শীর্ষ ১০ ধনকুবেরের জায়গা করে নেওয়া বাকি ব্যক্তিরা হলেন- ফ্রান্সের ফ্যাশন টাইকুন বার্নার্ড আর্নল্ট, মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, মার্কিন ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেট, গুগলের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ, অ্যালফাবেটের প্রেসিডেন্ট সের্গেই ব্রিন, সফটওয়্যার কোম্পানি ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি আলিসন, মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী স্টিভ বালমার, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি।
বরাবরের মতো তালিকায় রাজত্ব করছেন আমেরিকানরা। শীর্ষ ধনীদের মধ্যে ৭৩৫ জনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার।
এরপর আছেন চীনের নাগরিকরা। ফোর্বসের তালিকায় চীনা ধনীর সংখ্যা ৬০৭, তাদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার।
তবে বেহাল দশা রাশিয়ান নাগরিকদের। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া এখন নানা রকম আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের কবলে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে। ফলে ধনীর সংখ্যাও কমে গেছে। গতবারের তুলনায় ধনীদের সংখ্যা কমেছে ৩৪ জন।
এবারের তালিকায় গত বছরের চেয়ে সম্পদ বেড়েছে ১ হাজার শীর্ষ ধনীর। নতুন যুক্ত হয়েছেন ২৩৬ জন। আর এ বছরই প্রথম কয়েকজন ধনী বিশ্বের নানা দেশ থেকে এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। দেশগুলো হলো- বার্বাডোজ, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া ও উরুগুয়ে।
তবে এবছর শনির নজর পড়েছে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের ওপর। এক সময় শীর্ষ ধনীর তালিকায় ওপরের দিকে থাকলেও এবার তিনি ১৫ নম্বরে নেমে গেছেন।তথ্য বেহাতের অভিযোগে সিনেটের কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে জাকারবার্গকে। যার প্রভাব পড়েছে তার ব্যবসাতেও। এজন্য তার সম্পদও কমে গেছে।
চলতি বছরের ১১ মার্চের পর এই ধনীদের স্টক মূল্য ও মুদ্রার বিনিময় হারের সাপেক্ষে এই তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফোর্বস।