অটিজম এমন এক জটিল অবস্থা, যাতে কথা বলতে, অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে বা আচরণের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। অটিজম আক্রান্ত রোগীর পক্ষে শব্দ, অঙ্গভঙ্গী, মুখের অভিব্যক্তির মাধ্যমে নিজের ভাব প্রকাশ করা কঠিন। এমনকি নতুন জিনিস শেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। অটিজম মূলত অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বা এএসডি।
উপসর্গ
এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি কী? ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারকে কলকাতা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে জানান, শিশুদের বৃদ্ধির একাধিক স্তর থাকে। দৈহিক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বৃদ্ধিও এমনই একটি স্তর। এই সময়ে শিশু মাকে দেখে হাসে, কোনও কিছুর দিকে আকার ইঙ্গিতে নির্দেশ করে। অর্থাৎ সমাজে চলতে শেখার শুরু হয়। এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়াই অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের লক্ষণ। কারও সঙ্গে মেলামেশা না করা, অনেক খেলনার মাঝেও কেবল একটি খেলনা নিয়ে খেলা, নতুন কিছুতে আগ্রহ না দেখানো, নাম ধরে ডাকলে সারা না দেওয়া বা একটানা আপন মনে থাকার মতো লক্ষণ এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলির মধ্যে অন্যতম।
সৌরভ আরও বলেন, সদ্যজাত অবস্থা থেকেই এই সমস্যা শুরু হতে পারে। মূলত স্কুলে যাওয়ার বয়সের আগেই মূল উপসর্গগুলি পরীক্ষা করা দরকার। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস ১৬ থেকে ২৪ মাস বয়সি শিশুদের বিশেষভাবে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছে। বয়স অনুযায়ী শিশুর ব্যবহারে কোনও অসামঞ্জস্য দেখলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে বলেও জানান তিনি।
অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক শিশুদের বৃদ্ধিও দেরিতে হতে পারে। তাই আগেভাগেই বেশি দুঃশ্চিন্তা করার কারণ নেই।
কাদের ঝুঁকি বেশি
মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে অটিজম চারগুণ বেশি দেখা যায়। পরিবারে এই রোগের ইতিহাস থাকলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি বেশি বয়সে সন্তানধারণ করলে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অ্যালকোহল বা অ্যান্টি-সিজার জাতীয় ওষুধ খেলে অটিস্টিক শিশু জন্মানোর ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিছু গবেষণা বলছে, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, এই রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে।
চিকিৎসা
আসলে এখন পর্যন্ত অটিজমের বিশেষ কোনও চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর বিকাশ সহজতর হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।