বাঁশের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বাঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে গৃহস্থলীর নানা তৈজসপত্র। পৌষের বিকেলের বাড়ির উঠানে মিষ্টি রোদে বসে নারী ও পুরুষ মিলে দক্ষ হাতে তৈরি করছেন দিনপঞ্জিকা, কলমদানি, ঝাড়বাতি, ওয়ালমেটসহ ঘর সাজানোর নানা তৈজসপত্র। তাদের কেউ বাঁশ চেঁছে সমান করছেন। কেউ সেই বাঁশের টুকরায় দিচ্ছেন রঙের প্রলেপ। কেউ ফুটিয়ে তুলছেন প্রাকৃতিক চিত্রসহ নানা ছবি। এমন সুন্দর দৃশ্যের দেখা মিলবে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সীমান্তবর্তী আনন্দপুর গ্রামে।
এই গ্রামের বাসিন্দা শাহ জামাল। তার পরিবারের সবাই মিলে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করছেন বাঁশের তৈজসপত্র। তাদের তৈরি ঘর সাজানোর এসব নান্দনিক শিল্পকর্ম এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকায়। জামাল অনবদ্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার। পরিবারের সদস্যরা বংশপরম্পরায় বাঁশশিল্প নিয়ে কাজ করছেন, সচ্ছলতাও এসেছে এ শিল্পের হাত ধরে।
একসময় বুড়িচং উপজেলার আনন্দপুর, জঙ্গলবাড়ী, পাহাড়পুরসহ আশপাশের গ্রামে অন্তত ৩০০ পরিবার হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। কাঁচামাল ও দক্ষ জনবলের অভাবে এ পেশায় অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানায় স্থানীয়রা।
১৯৫৫ সাল থেকে তার বাপ-দাদারা বাঁশের এ শিল্পকর্ম তৈরিতে যুক্ত হয়েছিলেন জামাল। আর একেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সাল থেকে বাঁশের তৈরি শিল্পকর্মে মনোযোগী হন জামাল। এ শিল্প দিয়েই পরিবার সচ্ছলতা আসে তার। এখন আটজন কর্মচারী ছাড়াও জামালের পরিবারের তিন ভাই, তাদের দুই বউ, এক বোন এ শিল্পকর্মের সঙ্গে জড়িত। মাস শেষে তারা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতন পান। সব বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করেন জামাল।
প্রকারভেদে বাঁশের তৈরি একেকটি পণ্য ২৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঢাকা থেকে পাইকাররা অর্ডার করেন। তাদের অর্ডার অনুযায়ী দিনপঞ্জিকা, ওয়ালমেট, কলমদানি, ঝাড়বাতি, টেবিল ল্যাম্প, ফটোফ্রেম, দরজার পর্দাসহ নানা প্রকারের শোপিস তৈরি করেন জামাল। এসব শোপিস ঢাকা থেকে দুবাই, ইতালি, আমেরিকাসহ যেসব দেশে বাঙালিরা থাকেন সেসব দেশে যায়।
দেশে শুষ্ক মৌসুমে, বিশেষ করে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাঁশের তৈরি এ শিল্পপণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে।