ব্রিটিশ রাজবধূ অর্থাৎ ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট বাংলাদেশে তৈরি পোশাক পরে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
গত মার্চে বেলিজ এর গুড লিভিং ক্যাম্পের চিকুইবুল সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবস্থিত মায়া সভ্যতার ক্যারাকোল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পরিদর্শনের সময় কেট বাংলাদেশে তৈরি প্যান্ট পরেন। ‘জি স্টার’ ব্র্যান্ডের এই প্যান্টটি তৈরি করেছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এমবিএম গ্রুপ।
ভয়েস অব আমেরিকা তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায়।
কেট শুধু যে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবেই নয়, তিনি বিশ্বে ফ্যাশন সচেতন নারী হিসেবেও সমান সমাদৃত। বিশ্বের নামজাদা সব ফ্যাশন ডিজাইনাররা তার জন্য পোশাক তৈরি করেন। আর এটা তো স্বাভাবিক, ব্রিটিশ রাজপরিবারের পুত্রবধূ যাই পরুক সেই পোশাক ফ্যাশন সচেতনদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয় যে, এমবিএম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মাহমুদুর রহমান। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিম রহমান।
ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমবিএম গ্রুপের অ্যাসিসট্যন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ মেহরুজ জলিল বলেন, ‘আমেরিকা, ইউরোপের দেশসমূহ ও জাপানের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের পোশাক এমবিএম গ্রুপ তৈরি করে থাকে। জি স্টারের সাথে আমরা প্রায় ৪ বছর ধরে কাজ করছি। এমবিএম গ্রুপেরই তৈরি একটি পোশাক সম্প্রতি কেট মিডলটন পরেছেন। পোশাকটি জি স্টারের জন্য আমরা তৈরি করেছিলাম। আমরা যে বিশ্বমানের পোশাক উৎপাদন করি, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বার্তাটি আবারও সবার কাছে যাবে বলেই বিশ্বাস করি।’
গতবছর ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
এমবিএম শুধু যে নারী-পুরুষদের জন্য পোশাক উৎপাদন করে তাই নয়, শিশুদের পোশাকও উৎপাদন করে।
এছাড়াও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিশ্বের সর্বোচ্চ ফ্যাশন সোসাইটিতে পৌঁছে যাচ্ছে, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আমাদের গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি আমাদের গর্ব, আর্থসামাজিক চিত্রবদলের জাদুকাঠি। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে এই তৈরি পোশাকশিল্প। দারিদ্র্য দূরীকরণ ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে তৈরি পোশাকের প্রথম সারির ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরেছে। ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্য আমাদের দেশের একটি প্রতিষ্ঠানের পোশাক পরেছেন এটি বাংলাদেশের পোশাককে বিদেশে পজিটিভ একটি বার্তা দেবে বলে মনে করি।’
তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ সংগঠন বিজিএমইএ’র এই শীর্ষ নেতা আরও জানান, গার্মেন্টস শিল্পে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ১৬০টি দেশে পোশাক রপ্তানি করে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ শক্ত ভিত গড়তে পেরেছে। দেশের অর্থনীতির চেহারাই বদলে দিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। পাঁচ দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় ৯৬ গুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যে সকল পোশাক রপ্তানি হয় তাতে একটি স্লোগান লেখা থাকে- ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। আগামী বছর থেকে এই ইংরেজি স্লোগানের পাশাাপাশি বাংলা ভাষাতে ‘বাংলাদেশে তৈরি’ কথাটিও লেখা থাকবে বলে ভয়েস অব আমেরিকাকে জানিয়েছেন বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট।