করোনার কারণে শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বে খাদ্যশস্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে যার দাম ছিল সর্বোচ্চ। গত বছর করোনা মহামারির পর থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্যদ্রব্যের এই দাম বাড়তে থাকে। কোনো কোনো দাম আবার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
সম্প্রতি জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (ফাও) বিশ্বব্যাপী খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে এই সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে সংস্থাটি বলছে, ভবিষ্যতে এই খাদ্যশস্যের দাম আরও বাড়তে পারে।
ফাওয়ের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, করোনা মহামারি শুরু হবার পর থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বাড়তে থাকে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, গম, বার্লি, বিভিন্ন ডেইরি পণ্য, মাছ, মাংস সবকিছুর দাম বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এই সব শস্যের উৎপাদন কমে গেছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে অনেক দেশে বাড়তি মজুদের কারণে দাম বেড়েছে।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বিশ্বে এক মাসের ব্যবধানে মাংসের দাম ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের খামারগুলোতে এভিয়ান ফ্লু সংক্রমিত হবার কারণে এই দাম বেড়েছে।
গত এক বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। সরকারের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। পাইজাম চালের দাম বেড়েছে ২২ শতাংশের বেশি। এসময় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পাম অয়েলের দাম। এক বছরের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম বৃদ্ধির হার প্রায় সাড়ে ৩৯ শতাংশ।
ফাও বলেছে, আবহাওয়ার কারণে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে পামের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই তেলের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, চীনে অতিরিক্ত পাম অয়েল মজুদ করার কারণে বিশ্ববাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া বিশ্ববাজারের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে।
বাংলাদেশে এখন প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৬ থেকে ১২১ টাকায়। এছাড়া দেশে এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ, ময়দার দাম বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। মসুরডালের দাম এক বছরে ৯ শতাংশ বেড়েছে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম গত এক বছরে বেড়েছে ২৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
ফাও বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের ওপর একটি সিচুয়েশন রিপোর্ট দিয়েছে। করোনাকালে নিত্যপণ্যের দাম কেন বাড়বে সে বিষয়ে এতে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
ফাও বাংলাদেশ অফিস বলছে, করোনা শুরু হবার পর বাংলাদেশের সরবরাহ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে লকডাউনের সময় এ সরবরাহ ব্যবস্থা নিরবিচ্ছিন্ন ছিল না। এর কারণে পণ্যের দামে যে ঊর্ধ্বগতি ছিল তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি আরও বলছে, লকডাউনের সময় সাধারণ জনগণের মধ্যে পণ্য মজুদের প্রবণতা শুরু হয়। ফলে লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে বাজারে পণ্যমূল্য ১৬ শতাংশ বেড়ে যায়। পরে তা আরও বেড়ে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়।