ইফতারে মেহমান আসবে, খাতির যত্নে যেন কোন ত্রুটি না থাকে। বিকাল চারটা থেকেই লালমাটিয়া ডি ব্লকে ইফতারের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন ‘মেহমানখানা’র স্বেচ্ছাসেবকরা।
কেউ কলেজে পড়েন, কেউ চাকরি করেন, আবার এলাকাবাসীরাও স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেন মেহমানখানার কাজে। কোন প্রাতিষ্ঠানিক নাম বা কাঠামো না থাকলেও প্রত্যেকের কাজেই মিশে থাকে যত্ন আর ভালোবাসার ছোঁয়া।
বিকেল চারটার মধ্যেই সব আয়োজন সম্পন্ন। লাইন ঠিক করা, প্লেট সাজানো এবং খাবার পরিবেশনের সব কাজ। ইফতারের আয়োজনে আছে মুড়ি, ছোলা, চিড়া, খেজুর, জিলাপি, লেবুর শরবত।
গতবছরের মতো এবছরও নিম্ন আয়ের মানুষ, গরিব, অসহায়, ছিন্নমূল মানুষদের জন্য প্রতিদিন এই ইফতারের আয়োজন করছেন লালমাটিয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবকের দল।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ইফতার বিতরণ শুরু। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ইফতার গ্রহণ করছেন। ৬টার দিকে লালমাটিয়া ডি ব্লকের কয়েকটি রাস্তায় দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে রিক্সা রেখে তার ওপর বসে অপেক্ষা মেহমানখানার ইফতারের জন্য।
স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রত্যেকের কাছে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। সঠিক সময়ে ইফতার পৌঁছে দেয়ার তৃপ্তি একেবারেই আলাদা।
ভিন্নরকম এই মেহমানখানার উদ্যোক্তা আসমা আক্তার লিজা। গত বছরের লকডাউনে ছিন্নমুল শিশুদের খাবারের কষ্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেন, প্রতিদিন অন্তত এক বেলা খাবার তুলে দেবেন তাদের মুখে। সে অনুযায়ী রান্না করা খাবার প্রতিদিন বিতরণ করেছেন অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে।
লকডাউন তুলে নেওয়ার পর অসহায় মানুষের জন্য লিজার এমন আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়নি। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত প্রতি শুক্রবার পথশিশুদের জন্য রান্না করা খাবারের আয়োজন করেন তিনি।
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহযোগিতা, অনুদানে চলছে মেহমানখানা। নিম্ন আয়ের মানুষ যেমন, রিক্সাওয়ালা, গার্ড, ঝাড়ুদার, যাদের কাছ থেকে স্বল্প মজুরিতে প্রতিনিয়ত সেবা নেই আমরা। অথচ তাদের জন্য করা হয়না তেমন কিছুই। সেই চিন্তা থেকেই মেহমানখানার উদ্যোগ, জানালেন মেহমানখানার আরেক উদ্যোক্তা সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন।
শোভন জানান, মেহমানখানা কোনো পেশাদার সংগঠন নয়। বা বড় কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সাহায্যেও চলে না। দেশের বিভিন্ন মানুষের সাহায্য আর স্বেচ্ছাসেবিদের সাহায্যে চলে মেহমানখানা। প্রতিদিনই দেখা যায়, কেউ না কেউ অল্পকিছু হলেও সাহায্য করছেন। অনেকে আবার চাল, ডাল, চিড়া, বুট বা চিনি দিয়ে সাহায্য করে।
মেহমানখানার একজন মেহমান, পেশায় যিনি রিক্সা চালক, সন্তুষ্ট প্রকাশ করলেন আয়োজনে। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় ইফতার কিনে খাওয়া খুব কষ্টসাধ্য। লকডাউনে যেখানে আয়ের পরিমাণ খুবই কম। সৃষ্টিকর্তা এবং আয়োজদের ধন্যবাদ জানালেন বেশিরভাগ মেহমান।
মানুষের জন্য যারা কিছু করতে চান, যার যার এলাকায় ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও এমন আয়োজন করে মানবতার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন এই মেহমানখানার আয়োজকেরা।