অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টে অভিযান চালিয়ে ৫২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে ঢাকার মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরইমধ্যে এই ভ্যাট ফাঁকির টাকা জমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অনলাইন প্লাটফর্মে ব্যবসা পরিচালনা করছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৮ জুন আলেশা মার্টে অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। সহকারী পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন এর নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানের তথ্য আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানানো হয়।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়,জুন মাসের ওই অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরণের সামগ্রী অনলাইনে অর্ডার নেয়। এরপর ক্রেতার কাছে সেই পণ্য বিক্রি করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়। কিন্তু তাদের প্রাপ্ত কমিশনের উপর আরোপিত ভ্যাট যথাযথভাবে প্রদান করে না।
অভিযানে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আরিফ আহমেদ ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংশ্লিষ্ট দলিল উপস্থাপন করে সহযোগিতা করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করে হিসাব বিবরণীও জব্দ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়,চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে আলেশা মার্ট মোট ১৮১ কোটি ৭৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। এসব পণ্যের ক্রয়মূল্য ছিল ১৭৫ কোটি ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৩৯৬ টাকা। এক্ষেত্রে কমিশন হিসেবে তাদের আয় ৬ কোটি ৪৮ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭১ টাকা।যার বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে প্রযোজ্য ভ্যাট দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ টাকা।
অনলাইনে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনের উপর প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তা দেয়নি। এক্ষেত্রে উক্ত মেয়াদে কমিশন বাবদ অপরিশোধিত ভ্যাট এর পরিমাণ ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ টাকা।
অনুসন্ধানে আরো দেখা যায় যে,লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে উল্লিখিত সময়ে বিভিন্ন কেনাকাটার উপর উৎসে ভ্যাট ৪ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৭৭ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাট এর পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৯১৩ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪৩৬ টাকার ফাঁকি দিয়েছে।
অর্থাৎ,উল্লিখিত ৫ মাসে কমিশনের উপর প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ টাকা এবং উৎসে ভ্যাট বাবদ ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪৩৬ টাকাসহ সর্বমোট ৫২ লাখ ২৯ হাজার ১৬০ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়।
পরে ভ্যাট গোয়েন্দা দপ্তরে অনুষ্ঠেয় শুনানিতে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ মেনে নেয় আলেশা মার্ট।তারা স্বেচ্ছায় ও স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারি কোষাগারে এ ভ্যাটের অর্থ জমা করে। বিষয়টি ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবেও জানিয়েছে তারা।
ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত থাকায় অনলাইন প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মামলার প্রতিবেদন ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে।