fbpx

মর্ত্য থেকে কৈলাসে ফিরে গেলেন দুর্গা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

শাঁখের ধ্বনি, ধূপের সুগন্ধি, ঢাক-করতাল-কাঁসার বাদ্যের তালে আরতি ও অশ্রুভেজা ভালোবাসায় দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাচ্ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শনিবার ষষ্ঠীর সকালে যে মহাউৎসবে শুরু হয়েছিল দেবী বন্দনা, বুধবার বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের দুর্গাপূজা।

সনাতন ধর্মআনুসারীদের মতে, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা পিতৃগৃহ থেকে পুত্র-কন্যা নিয়ে ফিরে যাবেন কৈলাসে তার স্বামী শিবের ঘরে। এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে।

শাস্ত্র বলছে, এবার দেবী দুর্গা এসেছেন হাতিতে। দশমীতে মা কৈলাশে ফিরছেন নৌকায় চেপে। দুর্গার গজে আগমনের ফলশ্রুতি হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। আর নৌকায় গমনের ফলশ্রুতি শস্যবৃদ্ধি এবং জলবৃদ্ধি।

গত দুই বছর করোনার কারণে উৎসবের জৌলুস অনেকটাই ফিকে ছিল। কিন্ত এবার পূজার সেই হারানো রূপ দেখা গেছে মণ্ডপে মণ্ডপে। পাঁচ দিনের নানা রীতি পালন সেরে বুধবার বিদায়ের আবহে শুরু হয় বিসর্জনের শোভাযাত্রা।

বিকেল গড়ানোর আগেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা এনে জড়ো করা হয় পলাশীর মোড় ও ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপ এলাকায়। স্বল্পগতিতে চলা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে চড়া পূজারিদের পাশাপাশি অনেকে পায়ে হেঁটে শোভাযাত্রায় শামিল হন।

এবার ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে পলাশী-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে নবাবপুর রোড থেকে সদরঘাট হয়ে ওয়াইজঘাটে বুড়িগঙ্গা তীরে শেষ হবে শোভাযাত্রা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে আগেই এমন দিক নির্দেশনা দেওয়া ছিল।

বিকাল ৪টায় বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে পুরান ঢাকার শঙ্খনিধি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীকে বিদায় জানানো শুরু হয়। আর ঘাটে আসার পর ভক্তরা শেষবারের মত ধূপধুনো নিয়ে আরতি নাচেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্যে নৌকা থেকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ‘মাতৃরূপী’ দেবীকে এক বছরের জন্য বিদায় জানান ভক্তরা।

ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল বলেন, ‘বিভিন্ন ঘাটে রাজধানীর নানা মণ্ডপের প্রতিমা একে একে বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে দেড় শতাধিক প্রতিমা বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে বিসর্জনের পরিকল্পনা আছে।’

গতবার কুমিল্লার নানুয়াদিঘিতে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তার যেনো কোনো ধরনের পুরনাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য শুরু থেকেই সজাগ ছিল আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে পুলিশের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যদেরও তৎপর ভূমিকায় দেখা যায়। এছাড়া শোভাযাত্রা যেসব সড়ক ধরে যাবে সেসব সড়কে নেওয়া হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এর আগে বুধবার সকালে দশমীর বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন। পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়। এরপর পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। এরপর মণ্ডপে মণ্ডপে চলে সিঁদুর খেলা। নারীরা একে অপরের গালে ও বিবাহিতরা কপালে সিঁদুর দিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে শ্রী রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী, দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব। শরৎকালে শ্রী রাম দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামেও পরিচিত।

Advertisement
Share.

Leave A Reply