fbpx

মানবতাবিরোধী অপরাধে তিন রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখার তিন রাজাকারকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ  ট্রাইব্যুনাল।

এই তিন যুদ্ধাপরাধী হলেন- আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই, আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল এবং তার ভাই আব্দুল মতিন। তাদের মধ্যে আব্দুল মতিন পলাতক; বাকি দুজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার এবং কে এম হাফিজুল আলম।

এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচ দফা অভিযোগ আনা হয়। সেগুলোর সবই প্রমাণিত হওয়ায় তিন আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে।

আসামিদের মধ্যে মনাইয়ের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এম সারোয়ার হোসেন, হাবুলের পক্ষে আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। হাবুলের ভাই পলাতক আব্দুল মতিনের পক্ষেও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে আব্দুস সাত্তার পালোয়ানই মামলা পরিচালনা করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।

আজিজ স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মতিন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর মান্নান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইসলামী ছাত্রসংঘের (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন) নেতা ছিলেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধে এই তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর।

২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ১ মার্চ আজিজ ও মান্নানকে গ্রেপ্তার করে মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানা-পুলিশ। ২ মার্চ এই দুজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। অপর আসামি মতিন শুরু থেকে পলাতক।

২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থা তিন আসামির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে মৌলভীবাজারের বড়লেখা এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মতো পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে।

গত ১২ এপ্রিল মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। সেদিন মামলাটি যেকোনো দিন রায় ঘোষণার জন্য রাখেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার রায় আজ (১৯ মে) ঘোষণা করা হবে বলে ১৭ মে তারিখ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

আসামীদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচ অভিযোগ :

প্রথম অভিযোগ:

১৯৭১ সালের ১৯শে মে আসামিরা মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার ঘোলসা গ্রাম থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতা হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাসসহ মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস এবং শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করেন। তিনদিন বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতনের পর জুরি বাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাসসহ মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাসকে হত্যা করে। শ্রীনিবাস দাস কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যান এবং দুদিন পর বাড়ি ফিরে আসেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ:

১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে, আসামিরা বড়লেখা থানার বিওসি কেছরিগুল গ্রাম থেকে সাফিয়া খাতুন ও আবদুল খালেককে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে আসামিরা সাফিয়া খাতুনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে শাহবাজপুর রাজাকার ক্যাম্প ও বড়লেখা সিও অফিসে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়েও সাফিয়া খাতুনকে ধর্ষণ করা হয়। ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা সাফিয়া খাতুনকে সিও অফিসের বাংকার থেকে উদ্ধার করে।

তৃতীয় অভিযোগ:

১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মঈন কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করে বাড়ির মালামাল লুটপাট করে। রাজাকারেরা মঈনের বাবা বছির উদ্দিন, নেছার আলী, ভাই আইয়ুব আলী ও ভাতিজা হারিছ আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতন করে। ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে তারা মুক্তি পান।

চতুর্থ অভিযোগ:

১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার হিনাই নগর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মস্তকিন কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করে। মস্তকিনকে না পেয়ে তার ভাই মতছিন আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে তারা। নির্যাতনের ফলে মতছিন আলীর পা ভেঙে যায়। আসামিরা মস্তকিন ও মতছিন আলীর বাড়ির মালামাল লুট করে তিনটি টিনের ঘর পুড়িয়ে দেয়।

পঞ্চম অভিযোগ:

১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার ডিমাই বাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা মনির আলীকে আটক করে। তাকে সঙ্গে নিয়ে তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা হাবিব কমান্ডারকে আটক করার জন্য বাড়িতে হামলা করে তারা। সেখান থেকে আসামিরা মনির আলী ও তার স্ত্রী আফিয়া বেগমকে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে আসামিরা আফিয়া বেগমকে ধর্ষণ করে। হাবিব কমান্ডার ও মনির আলীর বাড়ির মালামালও লুটপাট করা হয়।

Advertisement
Share.

Leave A Reply