fbpx

ম্যাজিক বুলেট তত্ত্ব ও গণমাধ্যমের এথিক্স

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সিফাত কবীরের জন্ম ১৯৯২ সালের ১৫ আগস্ট। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভাসিটি অব বাংলাদেশ (আইউবি) এ পড়াশোনা করেছেন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিষয়ে। পেশায় তিনি সাংবাদিক। এখন প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রেডিও সিক্সটিনে। গণমাধ্যম নিয়ে তিনি নিয়মিত লিখছেন বিবিএস বাংলা’য়।

পথ কি হারিয়ে ফেলেছে দেশের গণমাধ্যম? সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় গণমাধ্যমকে। বলতে শুনি গণমাধ্যম হবে গণমানুষের। কথা বলবে সমাজের এবং জনগণের। গণমানুষের সেই গণমাধ্যম কি তার পথ হারিয়েছে? বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে শুধু আমাকেই নয় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে অনেককেই ভাবাচ্ছে।

সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমকে রাষ্ট্র বা সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। একুশ শতকের শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গণমাধ্যম আদৌ কি চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে শক্তিশালী? আমরা সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম অর্থাৎ প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া কিংবা অনলাইন ভিত্তিক পত্রিকাগুলোকে সমাজের আয়না বলে থাকি।

সমাজের সিংহভাগ মানুষ এখনো অনেকটাই গণমাধ্যমের উপর নির্ভরশীল। গণমাধ্যম আজ এতটাই শক্তিশালী যে কলমের একটি খোঁচাই কেড়ে নিতে পারে অপরাধীর রাতের ঘুম। আবার শান্তির ঘুমও এনে দিতে পারে ন্যায়ের পথে থাকা সাধারণ নাগরিকের।

সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র হিসেবে আমি একটি তত্ত্ব’র উপর এখনো বিশ্বাসী, যদিও এ নিয়ে অনেকে ভিন্নমত পোষণ করেছেন বিভিন্ন সময়ে এবং আমি তাদের মতামতকে সম্মান জানাচ্ছি।

ম্যাজিক বুলেট তত্ত্বটিতে বলা হয়, ‘মিডিয়ার এমন একটি ক্ষমতা রয়েছে যা সমাজে বুলেটের মতো কাজ করে। মিডিয়া যা বলবে, সমাজ, সমাজের মানুষ সেভাবেই কাজ করবে।’

এখানে দু’টি শব্দ- একটি ‘ম্যাজিক’, অন্যটি ‘বুলেট’। দু’টি শব্দই কিন্তু নিজ ক্ষমতা ও কার্যকারিতায় শক্তিশালী। জাদুর শক্তি দিয়ে যেমন যেকোনো কিছু পাল্টে ফেলা যায়, ঠিক তেমনটি ঘটলে আমরা বলি… ‘বাহ যাদুর মতো কাজ করেছে’। আর বুলেট যেমন ছুটে এসে দ্রুত আঘাত করে, তেমন কিছু ঘটলে আমরা বলি, ‘বাহ! বুলেটের মতো কাজ হয়েছে’।

হ্যারোল্ড ল্যাসওয়েল এই ম্যাজিক বুলেট তত্ত্বের আবিষ্কারক, তিনি মিডিয়ার ক্ষমতাকে এমনভাবে দেখেছেন যে, তার প্রকাশে এ দু’টি শক্তিশালী শব্দকে একসঙ্গে ব্যবহার করছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ‘মিডিয়া’ নামের ‘বন্দুক’ থেকে যখন গুলি বের হয়, তখন তা সরাসরি দর্শক, পাঠক শ্রোতার ‘মস্তিষ্কে’ আঘাত করে।

এটিকে ‘হাইপোডারমিক নিডল’ মডেলও বলা হয়। অর্থাৎ বলা হয়, ‘মিডিয়ার কোনো বার্তা তার দর্শকের মস্তিষ্কে সরাসরি ইনজেক্ট করে দেয়। তখন মিডিয়া যেভাবে চায়, পাঠক-দর্শক সেভাবেই আচরণ করে।’

তত্ত্বটি সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে একমত পোষণ করি। গত বেশ কয়েকবছর ধরে আমি পর্যবেক্ষন করছি যে, কিছু সংখ্যক মিডিয়া পাঠক ধরে রাখতে গিয়ে মেতে উঠেছে এক জঘণ্যতম খেলায়। আর তার ফলে এথিক্সের জায়গাটি ধ্বংস হচ্ছে। কারণ মিডিয়া যা আমাদের সামনে আনছে আমরা পাঠক তাতেই বিশ্বাস রাখি। কারণ আমরা মনেকরি তথ্যটি একজন সংবাদকর্মী ভালো করেই যাচাই করেছেন।

মনে রাখতে হবে মিডিয়া কখনোই একক ব্যাক্তির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে তৈরি হয়নি। এটি গণমানুষ এবং এই সমাজের জন্য তৈরি হয়েছে। তাই এথিক্স হারিয়ে ফেললে শুধু গণমাধ্যমের মানই নয় বরং একটি সমাজও ধ্বংসের অতি নিকট পৌঁছে যায়।

এখন বিষয় হচ্ছে গণমাধ্যম নাকি গণমানুষ, মনে রাখতে হবে গণমানুষের জন্যই গণমাধ্যম। আজ এথিক্সের জায়গাটি প্রশ্নবিদ্ধ, সাংবাদিকতা পেশাটি প্রশ্নবিদ্ধ এবং একজন সংবাদকর্মীর কর্মস্থল তার সব থেকে প্রিয় স্থান এমন হয়েছে আজ যে সেই প্রিয় স্থানটিও প্রশ্নবিদ্ধ। সবশেষে বিভিন্নভাবে অসামাজিক কথার সম্মুখীন হতে হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীদের। তার বড় প্রমাণ দেশের গণমাধ্যমের সংবাদের মান, তার হেডলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠকের নানা ভাষায় গালমন্দ।

আমি বলবো, এখনই সময় গণমাধ্যমকর্মীদের এথিক্সের জায়গাটি নিয়ে আরো শক্তভাবে কাজ করা। শুধু মুখেই নয় এথিক্সের জায়গাটি মনেও লালন করতে হবে। সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সাহস গড়ে তুলতে হবে। আয়না শুধু মুখে নয় সত্যিকার অর্থে সমাজের আয়না হয়ে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় সেই দিন বেশি দূরে নয় গণমাধ্যম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে গণমানুষ, তখন গণমাধ্যম কেবলই হয়ে উঠবে হাসির খোরাক।

Advertisement
Share.

Leave A Reply