স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ ধরন আলঝেইমারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য দুই দশক পর একটি নতুন ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘এডুহেম’ নামের ওষুধটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে গতকাল সোমবার।
সোমবার (৭ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (এফডিএ) ওষুধটির অনুমোদন দিয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলঝেইমার রোগের নতুন এ চিকিৎসাকে দাতব্য সংস্থাগুলো স্বাগত জানালেও এর প্রায়োগিক ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে এর সম্ভাব্য প্রভাব কি হবে, তা নিয়ে বিভক্ত বিজ্ঞানীরা। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের বায়োজেনের তৈরি এই ওষুধ আলঝেইমারের উপসর্গই নয়, এর অন্তর্নিহিত কারণ দূর করে বলেও বিবিসির এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেল এক পর্যালোচনায় এডুহেমের কার্যকারিতার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পায়নি। তবে, আলঝেইমারের নতুন এই ওষুধের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এর অনুমোদন অনেকটাই প্রত্যাশিত ছিল।
এফডিএ’র কর্মকর্তা প্যাট্রিজিয়া কাভাজ্জোনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কোনো রোগের প্রচলিত চিকিৎসায় নতুন ওষুধ অর্থপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হলে, সেই ওষুধের অনুমোদন দেওয়া হয়। আলঝেইমারের নতুন ওষুধটির অনুমোদন দেওয়ার পেছনেও এমন ধারণা কাজ করেছে। তবে এখানেও এটির কার্যকারিতা নিয়ে কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে’।
ওষুধটির অনুমোদন দেওয়া নিয়ে বিতর্ক থাকার কথা স্বীকার করে এফডিএ’র এই কর্মকর্তা বলেন, এডুহেমের অনুমোদন দেওয়ার আগে এর তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হয়েছে।
পরীক্ষায় দেখা যায়, আলঝেইমারে আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কের কোষে বেটা-অ্যামিলয়েড নামের একটি প্রোটিনের উৎপাদন কমিয়ে দেয় ‘এডুহেম’।
একটি তত্ত্ব থেকে জানা গেছে, কারও কারও ক্ষেত্রে বয়স বাড়লে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এ প্রোটিনের উপস্থিতি মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। এর ফলে আলঝেইমার রোগটি দেখা দেয়।
সর্বশেষ ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র আলঝেইমারের চিকিৎসার জন্য ওষুধের অনুমোদন দিয়েছিল। অনুমোদনপ্রাপ্ত ওষুধগুলোর মধ্যে সবই প্রয়োগ করা হয় আলঝেইমারের লক্ষণ বুঝে। সেখানে আলঝেইমারের কারণ বিবেচনা করা হয় না। এবারই প্রথম আলঝেইমারের কারণ নির্মূলের ওষুধ অনুমোদন করা হলো।
উল্লেখ্য, আলঝেইমার রোগটিতে স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ রোগটি কেন হয়, বিজ্ঞানীরা এখনও সবকিছু বের করতে পারেননি। তবে জীনের সম্পর্কের কথা তারা জানতে পেরেছেন। রোগটি আস্তে আস্তে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তা খারাপের দিকে যেতে থাকে। আলঝেইমারের উপসর্গগুলো একেকজনের একেকরকম হয়। মাথায় আঘাত, হতাশা এবং উচ্চ রক্তচাপের সাথে চিকিৎসকরা রোগটির সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।
আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত রোগী খুব সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে রাখতে পারেন না। কখনও কখনও এমন হয়, রোগী খাবার খেয়েছে কিনা তাও ভুলে যান। তারিখও মনে রাখতে পারেন না। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ভুলে যান। এ রোগে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বিচার বিবেচনা বুদ্ধি লোপ পেতে পারে।