fbpx

‘রোহিঙ্গা সংকট উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে’

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অতি জরুরি’ ভিত্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জোরদার করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, এ সংকট প্রশ্নে প্রধান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশকে মর্মাহত করেছে। অথচ, সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, তারা (রোহিঙ্গারা) মিয়ানমারের নাগরিক। সুতরাং, তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারেই ফিরে যেতে হবে।’

শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব, এ ব্যাপারে জরুরি প্রস্তাব গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং ‘আমি জোরদিয়ে বলতে চাই, এক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশে যা কিছু করছি তা সম্পূর্ণরূপে অস্থায়ী ভিত্তিতে করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যা কিছু করা সম্ভব তা অবশ্যই করতে হবে। এদিকে, তারা নিজেরাও তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়।

একইসঙ্গে, ন্যায় বিচার এবং দেশে প্রত্যাবর্তনে ভুক্তভোগি জনগোষ্ঠীর মধ্যে দৃঢ় আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিপীড়নের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। তাঁর এ ভাষণের পাক্কালে বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘হাই-লেভেল সাইড ইভেন্ট অন ফরসিবলি ডিসপ্লেস মিয়ানমার ন্যাশনালস (রোহিঙ্গা) ক্রাইসিস : ইম্পারেটিভ ফর এ সাস্টেইনাবল সল্যুশন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইউএজিএ’র গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ আলোচনায় এ সংকট তুলে ধরতে ঢাকার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর থেকেই এ সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য একেবারে ধারাবাহিকভাবে ইউএনজিএ’র অধিবেশনে তিনি সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এ ব্যাপারে ‘আমাদের সরকার মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ বজায় রেখেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঞ্চলিক ক্ষেত্রে, আমরা চীন ও ভারতসহ প্রধান শক্তিগুলোকে এ সংকট সমাধানে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে আসিয়ানকে আরো সক্রিয় রাখার চেষ্টা চালিয়েছি।’

বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে, আমরা বিশ্বেও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করে জাতিসংঘ প্রস্তাবের মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনার টেবিলে ধরে রেখেছি।

তবে, দুঃখজনকভাবে ‘দুর্ভাগা, গৃহহীন হয়ে পড়া মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য চালানো আমাদের প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত কোন আলোর মুখ দেখেনি।’

তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত তাদের একজনও তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারেনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিগত চার বছর ধরে বাংলাদেশ অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করে রয়েছে যে বাস্তুহারা এসব মানুষ নিরাপদে এবং মর্যদাসহকারে তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে।

তিনি বলেন, ‘তা সত্ত্বেও, আমাদের আহ্বান অবহেলিত রয়ে গেছে এবং আমাদের প্রত্যাশা অসম্পূর্ণ রয়েছে। এ সংকটের পঞ্চম বছর চলছে। এখনো, আমরা রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা রাখছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখা দেয়া এই মানবিক সংকট সমাধান করা ছিল একটি সম্মিলিত দায়িত্ব এবং বিভিন্ন সীমান্তে এর প্রভাব পড়ছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে অতি দ্রুত কিছু করতে ব্যর্থ হলে ‘আমাদের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মহা বিপদে পড়বে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের অগ্রগতির ঘাটতির কারণে হতাশা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে এবং তারা অতি সহজে জঙ্গিবাদী মতাদর্শেও শিকার হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকা- পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী এই সংকট সমাধানে পাঁচ দফা আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রথমত, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘আমাদের সকলের জোরালো প্রচেষ্টা’ চালানো প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা দূর করতে মিয়ানমারে রাজনৈতিক দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটানো এবং এই সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার একটি সংশোধন প্রয়োজন।

শেখ হাসিনা বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আসিয়ানের জোরদার প্রচেষ্টা দেখতে চান এবং ‘আমরা বিশ্বাস করি যে এক্ষেত্রে আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের পদক্ষেপ মিয়ানমারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।

তিনি বলেন, ‘চতুর্থত, আমাদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার মানবিক সহায়তা জরুরি হলেও এটি কোন স্থায়ী সমাধান নয়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও তাদের ধারণক্ষমতার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে জাতিসংঘ ও অংশীদারদের মিয়ানমারে অবশ্যই স্পষ্ট বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি দেখতে পাইনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া জনগোষ্ঠীর আস্থা সৃষ্টিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো গুরুত্বপূর্ণ।

‘রোহিঙ্গা সংকট উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি থেকে রেহাই দেয়া মোটেও উচিৎ হবে না।’ তিনি আরো বলেন, নির্যাতনকারীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো নিশ্চিত করতে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দাঁড় করাতে চলমান আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রতি ঢাকার জোরালো সমর্থন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার পরিষদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মেকানিজম করতে বিশ্বের জোরালো সমর্থন চান।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে নিপীড়ন এড়াতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক আগমনের শুরুতে আমাদের করনীয় ছিল, তাদের জীবন বাঁচানো অথবা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া। সীমান্ত বন্ধ করে দিলে তারা জাতিগত নিধনের মুখে পড়তো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবতার দিক বিবেচনা করে আমরা তাদের জীবন বাঁচানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করি।’
তিনি বলেন, এই মানবিক সিদ্ধান্ত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের জনগণের নিজস্ব বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রহণ করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এ সংগ্রাম শান্তি ও ন্যায় বিচারের জন্য সার্বজনীন লড়াইয়ের প্রতীক। অতএব, বাংলাদেশ বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পাশে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে এটাই ছিল খুবই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের সূচনা থেকেই এমনটা হয়ে আসছে।’
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন অনিষ্পন্ন থাকায় রোহিঙ্গারা নিরাপদে অস্থায়ীভাবে অবস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও জমির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তা করেছে।
তিনি বলেন, ‘একটি সীমাবদ্ধ এলাকায় এ ধরনের বিশাল জনগোষ্ঠীর দীর্ঘকাল অবস্থান আশেপাশের পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বিভিন্ন পাহাড় ও বনভূমি কেটে ফেলতে হচ্ছে।’
এমন কি মহামারি করোনাভাইরাসে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্যেও আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার কথা ভূলে যাইনি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, যতক্ষণ না আমরা সকলে নিরাপদ, আসলে ততক্ষণ আমরা কেউই নিরাপদ নয়। আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আমাদের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এনেছি।

তিনি বলেন, প্রতি বছর ৩০ হাজারের বেশি নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করায় ক্যাম্পে জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কক্সবাজারে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ কমাতে আমরা ভাসান চর নামের একটি দ্বীপে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। দেশের দক্ষিণে অবস্থিত এ দ্বীপের ১৩ হাজার একর এলাকা জুড়ে এ ব্যবস্থা করা হয়।
সূত্র : বাসস

Advertisement
Share.

Leave A Reply