গত ১ জুলাই নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ হয়। সে সময় করোনা মহামারির কারণে বন্ধ ক্যাম্পাসে সীমিত পরিসরে প্রতীকী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হয়। তখন জানানো হয়, শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান চার মাস পিছিয়ে ১ নভেম্বর থেকে উদযাপন করা হবে। কিন্তু, পরবর্তীতে তা আরও এক মাস পিছিয়ে ১ ডিসেম্বর থেকে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।
আগামীকাল বুধবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে পাঁচদিনব্যাপী এই উৎসবের ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এছাড়া, এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত বই, ফটোগ্রাফি অ্যালবাম ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শতবর্ষের ‘থিম সং’ পরিবেশন এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
শতবর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে টানা চার দিন বিকেল ৪টায় আলোচনাসভা এবং বিকাল সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও অ্যালামনাইরা এসব আলোচনাসভায় অংশ নেবেন। খ্যাতিমান শিল্পীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ এবং নৃত্যকলা বিভাগের শিল্পী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেবেন।
এরইমধ্যে, এ উৎসবকে কেন্দ্র করে টিএসসি, কার্জন হল, কলাভবন, বটতলা, স্মৃতি চিরন্তন এবং আবাসিক হলগুলোসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রবেশদ্বার ও সড়কে হয়েছে আলোক-সজ্জার ব্যবস্থা। ঢাবি ক্যাম্পাস রীতিমতো উৎসবে পরিণত হয়েছে।
‘শতবর্ষের আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে আলোক বাক্স ও রঙিন প্ল্যাকার্ডে উৎসবের আমেজ বইছে পুরো ক্যাম্পাসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল সংবাদমাধ্যমকে জানান, এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রায় ২০ হাজার মানুষের মতো বসার জায়গা আছে।
তিনি জানান, ‘করোনা মহামারীর কথা বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ১০ হাজার জনের বসার একটা ব্যবস্থা সেখানে রাখা হয়েছে। যারা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তাদেরকে সেখানে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে’।
তবে যারা রেজিস্ট্রেশন করেননি, তাদের জন্য টিএসসি, কলাভবন ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে বড় স্ক্রিনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ থাকবে বলে জানান উপ-উপাচার্য।
এছাড়া, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অর্জন করা ২০০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে একটি অনুষ্ঠান করা হবে বলেও জানান অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। এতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। এছাড়া, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন। কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরকে বিশেষ স্যুভেনির উপহার দেবেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি।
আগামী ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দেশের খ্যাতিমান শিল্পী ও ব্যান্ডের অংশগ্রহণে কনসার্টের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের সমাপ্তি হবে।