fbpx

শিবচরে দুর্ঘটনা: ৩০ ঘণ্টার বেশি বাস চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন চালক

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

রবিবার ভোরে চালক জাহিদ হাসান ইমাদ পরিবহনের বাসটি নিয়ে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে তার বাসটি। এতে তিনিসহ ১৯ যাত্রী নিহত হন।

হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ক্লান্ত দেহে ঘুমচোখে অতিরিক্ত গতিতে বাস চালানোর কারণে এত প্রাণহানি হয়েছে। জাহিদ হাসানের ছেলেও জানিয়েছেন, টানা বাস চালিয়ে তার বাবা ক্লান্ত ছিলেন।

দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সর্বশেষ চালকের সহকারী ইউসুফের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি করেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানিয়েছে, বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না। ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল।

হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল ভোর চারটার দিকে খুলনার ফুলতলা থেকে ইমাদ পরিবহনের বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ভোর ৫টা ৫ মিনিটে খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে বাসটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হয়। বাসটির চালক সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পদ্মা সেতুতে ওঠার আগে এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারান। এতে বাসটি এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে ছিটকে পড়ে। এরপর কমপক্ষে ১০০ ফুট নিচে এক্সপ্রেসওয়ের আন্ডারপাসের দেয়ালের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লেগে বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক জাহিদ হাসান, তার সহকারী ইউসুফসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসার জন্য ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে বাসটির সুপারভাইজার মিনহাজসহ আরও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, ইমাদ পরিবহনের চালক জাহিদ হাসান বৃহস্পতিবার ঢাকার দোলাইরপাড়ের বাসা থেকে বের হন। ওই দিন রাতেই যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ে যান পিরোজপুরে। পরের দিন শুক্রবার সকালে পিরোজপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। শুক্রবার বিকেলে আবার যাত্রী নিয়ে ছুটে যান পিরোজপুরে। রাতে পিরোজপুর পৌঁছে পরের দিন শনিবার সকালে আবার যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। ঢাকা থেকে শনিবার দুপুরে আবার ছুটে যান খুলনায়। রাতে বাসের মধ্যে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে রোববার ভোর চারটায় খুলনার ফুলতলা থেকে বাসটি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এভাবে তিনি গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় বাস চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

জাহিদের ছেলে রাতুল হাসান বাবার লাশ শনাক্ত করার জন্য শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাবা সপ্তাহে এক দিন বাসায় আসার সুযোগ পান। গাড়ি চালিয়ে তিনি সব সময় ক্লান্ত থাকেন। বৃহস্পতিবার বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকা, পিরোজপুর, খুলনা রুটে পাঁচটি ট্রিপে বাস চালিয়েছেন। বাবা শনিবার রাতে ফোনে জানান, তিনি খুব ক্লান্ত ছিলেন। রোববার ঢাকায় ফিরে বাসায় এক দিন বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাবা আমাদের ফাঁকি দিয়ে চির বিশ্রামে চলে গেলেন।’

উদ্ধার করা মরদেহগুলোর সুরতহাল করেছেন শিবচর হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক আবদুল্লাহেল বাকী। তিনি বলেন, বাসের প্রথম অংশের যাত্রীরা মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

ফরিদপুর জোনের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মাহাবুবুল হাসান বলেন, ‘বাসটির ফিটনেসে ও যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত শেষেই বাসটির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি জানান, এক্সপ্রেসওয়েতে যেন অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চলতে না পারে, সেজন্য তাদের টিম কাজ করছে। অতিরিক্ত গতিতে কোনো গাড়ি চললেই মামলা দিয়ে থাকেন তারা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply