লঙ্গরখানার চুলা থেকে গরম ভাত নেমেছে, সাথে মশুর ডাল আর পালং শাক। গরম গরম একটি পাত্রে পরিবেশন করা হচ্ছে- আর তার দিকে তাকিয়ে আছে সারি সারি মানুষ। মা, কোলের শিশুসহ পরিবারের সবাই হাতে প্লেট নিয়ে লাইন ধরে আছে একটু খাবারের আশায়-আর এটাই তাদের সারা দিনের খাবার। –এই দৃশ্য শ্রীলঙ্কার।
চন্দ্রিকা মানেল নামের চার সন্তানের এক মা ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘এখানে আসছি কারণ আমরা ক্ষুধার্ত।’
তিনি বলেন একটি রুটি কেনাও বড় সংগ্রাম। চন্দ্রিকা বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন ওদের দুধভাত দিতে পারতাম। এখন সবজিও দিতে পারি না।’
লঙ্গরখানাটি খোলা হয়েছে মাসখানেক আগ। অভাবের কারণে তিন দিন একটি কাঠাল খেয়ে কাটিয়ে দেয়া এক মায়ের সাথে দেখা হয়েছিল মোজেস আকাশ নামের এক যাজকের। এরপর কলম্বোর একটি গির্জার হলে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য এই লঙ্গরখানাটি চালু করা হয়।
ওই যাজক বিবিসিকে বলেন, ‘চার মাসে দুই প্লেট ভাত পাননি, এমন লোকও পেয়েছি।’
দেশটিতে কমতে থাকা মুদ্রার রিজার্ভ ও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে কয়েক মাস ধরেই চরম অর্থনৈতিক সংকট পার করছে লঙ্কানরা।
কর কমিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার সংকুচিত করা ও উচ্চাকাঙ্খী অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে বিপুল পরিমান ঋণ নেন লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। অনেক বিশ্লেষক এই সংকটের জন্য গোটাবায়াকেই দায়ি করছেন। সেই সাথে করোনা মহামারিতে পর্যটন খাতে ধস ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে।
সব মিলিয়ে চরম মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে এখন শ্রীলঙ্কা। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ বিবিসিকে এই কথা জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এ বছর শুরু থেকে দেশটির ৭০ শতাংশ পরিবার তাদের খাবারের পরিমান কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে জ্বালানির মজুদ ও জরুরি ওষুধও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।